For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

টানা বৃষ্টিতে সুন্দরবনের উপকূলীয় ৯ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

Published : Monday, 19 August, 2024 at 3:10 PM Count : 96

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বাগেরহাটের নয় উপজেলার শহরের বেশির ভাগ এলাকা। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক এলাকায় হাঁটু পানি জমেছে।

জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন তারা। টানা বৃষ্টিতে মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও কচুয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানিতে অনেকের ঘের ডুবে মাছ বেড়িয়ে গেছে। রোববার রাত থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার বাগেরহাট শহরের খানজাহান আলী রোড, রেল রোড, সাধনার মোড়, শালতলা, পিটিআই মোড়, খারদার স্কুল রোড়, জেলা হাসপাতাল মোড়, জেলা ডাকঘরের সামনে, বাসাবাটি, মিঠাপুকুরপাড় মোড়, পৌরসভার পাশে, জাহানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়ক, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পিছনসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে নিমজ্জিত দেখা যায়। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়িতে পানি উঠে গেছে। সড়কে পানি জমে থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুন। পানিবন্দি পরিবারগুলো এখন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।

এদিকে, টানা বৃষ্টির ফলে পেটের টানে রাস্তায় বের হওয়া রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। যাত্রী না থাকায় যেমন আয় নেই, তেমনি পানিতে নিমজ্জিত রাস্তায় দুর্ঘটনায়ও পড়ছেন অনেকে।
ইজিবাইকচালক মোস্তফা শেখ বলেন, পেট তো আর ঝড় বৃষ্টি বোঝে না। ছয় জনের সংসার চলে আমার পায়ের ওপর। তাই সকালে বৃষ্টি মাথায় রিকশা নিয়ে বের হইছি। কিন্তু লোকজন নেই। দুপুর ১টা পর্যন্ত ৭৫ টাকা হয়েছে। কি আর করা, একে তো বৃষ্টি তার ওপর রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে গেছে, মানুষ বের হয়ে কোথায় যাবে?

পথচারী হেমায়েত হোসেন বলেন, রাস্তাঘাটের সব জায়গায় পানি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিক না থাকার কারণে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটু সমান পানির মধ্যেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। 

আর কবে স্বাভাবিক হবে এই পৌর শহর? বলে আক্ষেপ করেন এই পথচারী।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের মেঝেতে পানি উঠে যায়। একদিন ধরে রান্নাবান্না বন্ধ শুকনা খাবার খাচ্ছি। আমাদের এখানকার ছয়টি পরিবারের একই অবস্থা। পানি নিষ্কাশন না হওয়া পর্যন্ত আমরা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবো না।

বর্তমানে মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামসহ পৌরসভা গত একদিন ধরে বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানি পানগুছি নদীর তীরবর্তী মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের, বাজারের প্রধান সড়ক, মোরেলগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক, মোরেলগঞ্জ সরকারি সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজের প্রধান সড়ক, অম্বিকাচরণ লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক ও মাঠে থৈ থৈ করছে।

পথচারী মো. আলম বলেন, চলমান টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভ্যান, অটোরিকশা প্রায় ডুবে যাওয়ার মত অবস্থা। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীদের।

সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ, অম্বিকাচরণ লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীরা জানায়, আমাদের ক্লাস যথাসময় শুরু হলেও টিফিনের সময় ও ছুটির সময় বাড়ি যেতে হলে আমাদের রাস্তায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। বৃষ্টি-জোয়ার এলে প্রধান সড়কে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠে কোনো কোনো জায়গায় হাঁটুর উপর পর্যন্ত পানি উঠে যাওয়ায় আমাদের বাড়ি ফিরতে অনেক কষ্ট  হয়। এ সময় এই সড়কে ভ্যান, অটোরিকশা পাওয়া যায় না। আর যারা থাকে তাদেরকে আশানুরূপ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়।

মোরেলগঞ্জ শহরের মুদি ব্যবসায়ী মো. সেলিম শেখ বলেন, বেলা ১২টা বাজলেই পানির চাপ বেড়ে যায়। প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। 

কাপড় ব্যবসায়ী মো. রবিউল বলেন, গ্রাম থেকে আসা ক্রেতারা তড়িঘড়ি করে চলে যায়। ফলে আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

বহরবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বৃষ্টি।-জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। জোয়ার-ভাটার খেলা চলে এ এলাকায়। এতে নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ পথচারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

বারইখালী ইউনিয়নের ১০৯ নং উত্তর সুতালড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস খানম বলেন, এমনিতেই আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট কাঁচা এবং প্রায়ই পানিতে ডুবে থাকে। এমন সময় জোয়ারের পানি উঠলে স্কুলে আসার প্রবেশ পথে পানি জমা হয়ে হাটু-কোমর পর্যন্ত পানি হয়ে যায়। এতে কোমলমতি শিশুরা স্কুলে আসতে পারে না, আর যারা আসে তারাও সঠিক সময় আসতে পারে না। জোয়ারের পানিতে বই-খাতা ভিজে যায়। প্রতিনিয়তই ঘটে দুর্ঘটনা, চারদিকে থৈ থৈ পানি ও রাস্তা খারাপ থাকায় কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় থাকেন।

অন্যদিকে, পানগুছি নদীর তীরবর্তী মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের ফেরীঘাট সংলগ্ন এলাকা, বারইখালীর কাশ্মীর, বলইবুনিয়ার শ্রেণীখালী, বহরবুনিয়ার ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের নতুন করে আধা কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা ধসে গেছে। হোগলাবুনিয়ার বদনীভাঙ্গা, সানকিভাঙ্গা, পাঠামারা, খাউলিয়া বাজারের ব্রিজ হুমকির মুখে আছে।

এছাড়াও, পঞ্চকরণের দেবরাজের পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীনে এক হাজার ২০০ মিটার অস্থায়ী বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পানগুছি নদীর ভাঙ্গনের ফলে ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর, গাছপালা বিলীন হয়ে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।

নদীর তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা, বারইখালীর চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল খান মহারাজ, হোগলাবুনিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান, বহরবুনিয়ার চেয়ারম্যান রিপন হোসেন তালুকদার বলেন, গত দুই দিনের পানির চাপে নদীর তীরবর্তী তাদের ইউনিয়নগুলো অনেক কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দেবরাজ পঞ্চকরণের অস্থায়ী বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে এক সপ্তাহ পানির চাপ থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গ্রামবাসীরা।

এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট মনিরুল হক তালুকদার বলেন, শুধু শহর রক্ষা বাঁধ নয়, ইতোমধ্যে গাবতলা হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত স্থায়ী বেড়িবাঁধের টেন্ডার ও কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের প্রস্তাবনা হয়েছে। বাস্তবায়নের অপেক্ষায় শহরবাসী। বেড়িবাঁধের কাজ সম্পূর্ণ  হলে এ সমস্যা থাকবে না।

বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জ শহর সংলগ্ন রামপাল-মোংলা হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যে পানগুছি নদীর ভাঙন থেকে বাগেরহাট জেলা সদর সংলগ্ন এলাকা সংরক্ষণ এবং বিষখালী নদী পুনঃখনন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।

-এসআই/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,