For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভাস্কর্যগুলো ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

Published : Monday, 19 August, 2024 at 12:27 PM Count : 136

মেহেরপুরে স্বাধীনতার সুতিকাগারখ্যাত ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স যেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কম বেশী ৬০০টি ছোট-বড় ভাস্কর্য। ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সেক্টরভিত্তিক ঘটনা। দেখলেই বোঝা যেত মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সেই দৃশ্য। বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর স্থাপন করা হয়েছিল ভাস্কর্যগুলো।

দেশী বিদেশী পর্যটক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জ্ঞান অন্বেষণ ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স। সেই কমপ্লেক্সের সব ভাস্কর্য ধ্বংস করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হয়েছে লুটতরাজ। 

এখন শুধু স্মৃতিসৌধ ছাড়া আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ইতিহাস। হামলা ও লুটপাটকারীরা প্রমাণ মুছে ফেলতে সব সিসি ক্যামেরা ভেঙে, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে নিয়ে গেছে হার্ডডিস্ক।

গত ০৫ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী-জনতা আনন্দ মিছিলে মেতে ওঠে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সুযোগসন্ধানী দুষ্কৃতিকারীরা। ওইদিনই সন্ধ্যার পর কয়েক দফা তাণ্ডব চালিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয় মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের স্মারক ভাস্কর্যগুলো।
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের কর্মবিরতির সুযোগকে কাজে লাগায় দুষ্কৃতকারীরা। তারা বিপুল সংখ্যক লোক এসে স্মৃতি কমপ্লেক্সের তোরণে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা কয়েকবার মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরামর্শ চেয়ে কোনো নির্দেশনা না পেয়ে তারা আত্মরক্ষার্থে ক্যাম্পের মধ্যে অবস্থান নেন। 

সে সময় হামলাকারীরা স্মৃতি কমপ্লেক্সের প্রধান তোরণ ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রথম দফায় যারা ভাঙচুর চালায় তারা শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভেঙে চলে গেছে। এরপর আরও কয়েক দফায় রাত পর্যন্ত সেখানে তারা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের তাণ্ডব চালিয়েছে বলে জানা যায়। সবশেষে ক্যাম্পে এসে আমাদের ওপর আক্রমণ করে অফিস ভাঙচুর করে এবং কন্ট্রোল রুম থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের হার্ডডিক্সটি খুলে নিয়ে যা।

মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে স্থাপিত আনসার ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুবেদার রবিউল ইসলাম বলেন, ইউএনও'র কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা না পেয়ে আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা ক্যাম্পে এসে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। পরিস্থিতি এমনই ছিল- সেখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে অপাররগতা প্রকাশ করেন।


উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ও প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের স্থান হিসেবে মেহেরপুরের মুজিবনগর ঐতিহাসিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শপথ গ্রহণের স্মৃতিকে অম্লান করে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে মুজিবনগরে প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের স্থানে স্থপতি তানভীর কবিরের নকশাতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে ১৯৯৬ সালে ওই স্থানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

স্মৃতি কমপ্লেক্সে একটি মানচিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টরকে দেখানো হয়েছিল। কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলির স্মারক ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছিল। সার্বিক ভাবে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স, ঐতিহাসিক আম্রকানন, ঐতিহাসিক ছয় দফার রূপক উপস্থাপনকারী ছয় ধাপের গোলাপ বাগান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত প্রদর্শন ছিল এখানে।

মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভেতরের অংশে ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর ভাস্কর্য। স্মৃতি কমপ্লেক্সের বাইরের অংশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ এবং পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্যসহ আরও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ওই ভাস্কর্যগুলোই মূলত পর্যটকদের আকর্ষণ করত। মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থান বাংলাদেশের মানচিত্রে প্রদর্শন করে। মানচিত্রটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরের মূল আঙিনায় স্থাপিত। সুদৃশ্য এ মানচিত্রটি মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের অবস্থান ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি সম্পর্কিত এক প্রামাণ্যচিত্র ছিল। যা দিয়ে পুরো মুক্তিযুদ্ধকে যে কারো চোখের সামনে তুলে ধরা সম্ভব ছিল। 

-এমআর/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,