For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

পদ্মায় ৩৭ বছর ধরে মাছের ডিম-রেণু শিকার করেন হান্নান

Published : Sunday, 18 August, 2024 at 7:14 PM Count : 75

‘প্রায় ৩৭ বছর ধরে পদ্মায় মাছের ডিম ও রেণু ধরি। ডিম দেখলে বুঝতে পারি কতটুকু কি মাছ হবে। ৯৫ শতাংশ বলতে পারি কি মাছ হবে। যেটা বলি হয়ও তাই। আর কয়েক দিন পরে পানির সাথে আইখরা মাছের ডিম আসবে। সাথে কিছু সংক্ষক রুই থাকবে। তবে ১৬ আনায় আইখরা মাছ হবে।’

এভাবে নিজের মাছ শিকার অভিজ্ঞতার কথাগুলো বলছিলেন জেলে হান্নান আলী। তিনি রাজশাহী পবা উপজেলার কাটাখালীর টাঙ্গন এলাকার পদ্মা নদীতে বিভিন্ন মাছের ডিম ও রেণু আহরণ করেন। তার এই কাজের অভিজ্ঞতা তিন যুগের বেশি। তাই তিনি নদীর পানি থেকে জালে ওঠা ডিম দেখলে বলতে পারেন কি মাছ হবে।

শুধু হান্নান আলীরই নয়, এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে মাদুদ, মনসুর ও চাঁদসহ আরও অনেকেই। তারা জানান, শ্যামপুর ঘাটে ১০ থেকে ১২ জন, সাহাপুরে ১৫ থেকে ২০ জন, টাঙ্গনে ৮ থেকে ৯ জন। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছের রেণু ধরা পড়ে ইউসুফপুর ও চারঘাটের। এই ২০০ জনের তিন মাসের জীবিকার উৎস পদ্মা থেকে মাছের রেণু আহরণ।

রাজশাহী মৎস অফিস সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করেন এমন জেলের সংখ্যা ১ হাজার ৭০০ জন। এদের মধ্যে মাছের ডিম ও রেণু ধরে কমপক্ষে ২০০ জন হবে। তারা পবার শ্যামপুর থেকে চারঘাট পর্যন্ত। বছরের আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্র মাস পদ্মা নদী থেকে এই জেলেরা ডিম ও রেণু সংগ্রহ করেন তারা। পুকুরের খামারিদের কাছে বিক্রি করেন। এছাড়া অনেকেই আবার পদ্মায় মাছ শিকার শেষে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
জেলে হান্নান আলী বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে পদ্মায় ডিম ও রেণু ধরি। এই ডিমগুলো ফোটার পরে বিভিন্ন ধরনের মাছ হয়। এরমধ্যে থাকে রুই, কাতলা, মিরকা, কালবাউস, আইখোরা, বোয়াল, চিতল। ডিমের রেণু সবাই চিনতে পারে না। আমরা ডিমের কোয়ালিটি দেখে বলতে পারি কত শতাংশ রুই হাবে, কত শতাংশ কাতল হবে। আল্লাহর রহমতে সেটাই হয়। সাধারণত আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্র মাসে পদ্মায় মাছের ডিম ও রেণু পাওয়া যায়। এই রেণুগুলো স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা হয়। অনেক জেলে বিভিন্ন উপজেলায় ভ্যান বা সাইকেল যোগে বিক্রি করেন। তবে তুলনামূলক বেশিরভাগ মাছের ডিম ও রেণু পদ্মাপাড় থেকেই বিক্রি হয়ে যায়।

ডিম ও রেণু আহরণে ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে থাকতে হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পদ্মা নদীতে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা মাচার উপরে পলিথিনের ছাউনির নীচে থাকতে হয়। ঝড় বা বৃষ্টি হলে উপরে উঠে আসি। ঘন্টায় ঘন্টায় জাল ঝাড়া না দিলে রেণুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রাতে ছয় থেকে সাতবার জাল থেকে মাছের ডিম ও রেণু তুলে জমানো পানিতে রাখতে হয়।

অনেক সময় একটানা তিনদিন পর্যন্ত মাছের রেণু পাওয়া যায়। তার পরে আবার আড়াই থেকে তিনদিন বন্ধ, এসময় রেণু তেমন পাওয়া যায় না। তবে পানি স্থীতিশীল অবস্থায় থাকলে প্রতিদিনই ডিম ও রেণু পাওয়া যায়। পানি বেশি হলে মাছ বেশি হয়, তা কিন্তু নয়। তবে পদ্মায় বেশি পানি থাকলে প্রতিদিনই ডিম ও রেণু পাওয়া যায়।

ডিম ও রেণুর দামের বিষয়ে হান্নান আলী বলেন, অনেক জেলে ডিম ও রেণুগুলো নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিক্রি করেন। তখন জেলেরা ডিম ও রেণুর দাম ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বিক্রি করেন। তবে সেই তুলনায় পদ্মাপাড়ে রেণুর দাম কম। কয়েকদিন আগে দাম বেশি থাকলেও বর্তমানে পদ্মাপাড়ে প্রতি ১০০ গ্রাম ডিম ও রেণু বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম করে মাছের ডিম ও রেণু পেয়ে থাকেন একেকজন জেলে। তার দাম পড়ে গড়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। তবে নদীর ধারেই ১৫ থেকে ১৭ হাতের জাল পাতায় খরচ তেমন নেই। শুধু এককালীন টাকা দিয়ে জাল কিনতে হয়। অনেকটাই বিনা খরচে মাছের ডিম ও রেণু আহরণ করা যায়।

অপরদিকে, হান্নানের মতো প্রায় ২০ বছর ধরে পদ্মায় মাছের রেণু শিকার করছেন মো. মাসুদ। তিনি বলেন, পদ্মায় প্রতিদিন ৫০ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম মাছের রেণু উঠছে জালে। এখন কম পাচ্ছি। তবে মাচাই সবসময় থাকতে হয়। মাঝে মাধ্যে বাড়িতে যায়। খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার আসি। সাধারণত আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্র মাসে পদ্মার মাছের ডিম ও রেণু বেশি পওয়া যায়। এ কারণে বিক্রিও বেশি হয়। আমাদের কাছ থেকে ডিম বা রেণু মাছগুলো পুকুর মালিকরা কিনে নিয়ে বড় করে তারা বিক্রি করেন।

হ্যাচারির তুলনায় নদীর মাছের পোনা ভালো দাবি করে তিনি বলেন, হ্যাচারির পোনা দ্রুত বড় হয় না। নদীর মাছের পোনা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। হ্যাচারির মাছ পুকুরে তিন মাসে ওজন হয় এক কেজি। আর নদীর পোনা পুকুরে একই সময়ে প্রায় ২ কেজি ওজন হয়। আর হ্যাচারির মাছ দুই কেজি হলে পেটে ডিম চলে আসে। আর নদীর পোনার মাছ তিন থেকে চার কেজি হলেও পেটে ডিম আসবে না। তাই পদ্মার রেণু মাছের চাহিদা বেশি। তবে নদীপাড়ে মাছের পোনার দাম কম। তবে তাদের মতো অনেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলার খামারিদের কাছে মাছ পৌঁছে দেয়। তখন তারা ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা কেজি মাছের পোনা বিক্রি করেন। পদ্মার পোনার চাহিদা আছে বলেই এতো দামে মানুষ কেনেন।

পবা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা থেকে খাওয়ার জন্য ডিম বা রেণু শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে জেলেরা পদ্মা থেকে মাছের ডিম বা রেণু আহরণ করতে পারবেন পুকুরে চাষের জন্য। পবা উপজেলায় ৩ হাজার ৮৭ জন জেলে রয়েছে। তারমধ্যে শুধু পদ্মায় মাছ শিকার করেন ১ হাজার ৭০০ জন জেলে। জেলেরা মাছের ডিম ও রেণু পদ্মা থেকে আহরণ করে বিক্রি করে থাকেন।

রাজশাহী জেলা মৎস কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাজশাহীতে মাছের পোনার চাহিদা মেটায় সরবারি-পাবলিক হ্যাচারি থেকে। এরমধ্যে ১৫ শতাংশ মাছের ডিম ও রেণু পাওয়া যায় পদ্মা নদী থেকে। তবে তুলনামূলক পদ্মার মাছের ডিম ও রেণুর চাহিদা ভালো।

আরএইচএফ/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,