আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজশাহী চারঘাটে সরকারি জলমহালগুলো নির্বিচারে দখল ও মাছ লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার সব জলমহালই ইজারা নিয়ে মাছের খামার গড়েছিলেন বিভিন্ন মৎস্যজীবী সমিতির জেলেরা। জলমহাল দখল ও মাছ লুট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কার্ডধারী সাধারণ জেলেরা।
চারঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৫টি জলমহাল তিন বছরের জন্য জেলেদের ছয়টি মৎস্যজীবী সমিতির কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। কার্ডধারী জেলে সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে সমিতির মাধ্যমে সেখানে মাছ চাষ করে থাকেন।
জানা যায়, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পর উপজেলা জুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বসতবাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে উপজেলার সরকারি জলমহালগুলোও দখল নেয় দুর্বৃত্তরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলে সমিতির নেতারা জানান, উপজেলার সবচেয়ে বড় জলমহাল ঐতিহ্যবাহী সলিয়ারদহ। এই জলমহালের আয়তন প্রায় ৫০ বিঘা। দ্বিতীয় বড় জলমহাল ডাকরার দহ। এ জলমহালের আয়তন প্রায় ১৮ বিঘা। এই দুই জলমহাল থেকেই অর্ধকোটির বেশি টাকার মাছ ও মাছের খাবার লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। লুটেরাদের বাধা দিতে গিয়ে জুয়েল আলী ও মাজদার রহমান নামে দুই যুবক গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বুধবার সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন জলমহালগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, জলমহালে রাখা নৌকা, মাছের খাবার তৈরির পাত্র, পাহারাদারের ঘরসহ বেশকিছু জিনিসপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে। গোডাউন থেকেও মাছের খাবারও লুট করা হয়েছে।
সলিয়ারদহ ইজারা পেয়েছে ঝিকরা মৎস্যজীবী সমিতি। এই সমিতির সভাপতি মদন হালদার বলেন, প্রায় ১৪ লাখ টাকায় তারা কয়েকজন জেলে মিলে জলমহালটি ইজারা নিয়েছেন। প্রায় ১০০ জন জেলে পরিবার এটার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সরকার পতনের পর অতিউৎসাহী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু সমর্থকের নেতৃত্বে জাল নামিয়ে জলমহালের প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ লুট করা হয়েছে। গোডাউন থেকে ৫ লাখ টাকার খাবারও লুট করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য বাকি নিয়ে তারা জলমহালে মাছের খামার করছিলেন। সরকার পরিবর্তনে জেলেরা একেবারে পথে বসে গেছেন।
ঝিকরা মৎস্যজীবী সমিতির হিসাবরক্ষক বাবু ইসলাম বলেন, দুর্বৃত্তরা জলমহালে হামলার পর মাছ লুট করে ট্রাকে করে ঢাকায় বিক্রি করেছে। তিনিসহ সমিতির কর্মকর্তারা দুর্বৃত্তদের ভয়ে কয়েক দিন জলমহালের আশপাশেও যেতে পারেননি। প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনি মঙ্গলবার জলমহালে গিয়েছিলেন। কিন্তু জলমহালে কোনো মাছ নেই। তাদের এতোদিনের শ্রম সব লুট করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ডাকরারদহ জলমহাল ইজারা পেয়েছে শলুয়া মৎস্যজীবী সমিতি। এ সমিতির সভাপতি রাহুল ঘোষ। ডাকরারদহে যৌথভাবে মাছ চাষ করেন ঝিকরা মৎস্যজীবী সমিতি ও চারঘাট পশ্চিমপাড়া মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যবৃন্দ।
চারঘাট পশ্চিমপাড়া মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি নিজে একজন বিএনপির কর্মী। অথচ সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা এক হয়ে তাদের পিটিয়ে আহত করে ডাকরা জলমহালের দখল নেয়। দুর্বৃত্তরা বিষ দিয়ে মাছ লুট করেছে। এতে তাদের প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছসহ প্রায় ২২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় তারা খুবই বিপাকে পড়েছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় হাবু, মোরশেদ, মিনারুল, বাবলুর নেতৃত্বে প্রায় দেড়শজন জলমহালে হামলা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন বলেন, জেলে সমিতিগুলো সরকারি জলমহাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে। মাছ লুট হওয়ার খবর পাওয়ার পর তিনি স্থানীয় সেনাক্যাম্পের সদস্যদের নিয়ে জলমহাল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। যারা মাছ লুট করেছে, তাদের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে ভুক্তভোগী জেলেদের। এছাড়া থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এখন মামলাও করা যাবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএইচএফ/এসআর