For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রমেক হাসপাতালের পরিচালকসহ ৪ জনকে ওএসডি

Published : Tuesday, 13 August, 2024 at 1:08 PM Count : 189

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রয়েছে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও স্বজনদের হারানির অভিযোগও। 

এসব কারণে রমেক হাসপাতালের পরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ চার জনকে ওএসডি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালীতে সংযুক্ত করা হয়।

তবে পরিচালকের দাবি, কোনো অনিয়ম, অভিযোগের কারণে তার বদলি হয়নি। তিনি ছয় মাস ধরে অন্যত্র বদলির চেষ্টা করছিলেন। 

সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সহকারী সচিব এম কে হাসান জাহিদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাদের ওএসডি'র তথ্য জানানো হয়।
তারা হলেন, রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মজিদুল ইসলাম, ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জোবাইদা জান্নাত ও আইসিইউ ইনচার্জ ডা. জামাল উদ্দিন মিন্টু।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুন অস্ত্রোপচারের জন্য রমেক হাসপাতালে ভর্তি হন রংপুর নগরীর কেরানীপাড়া চৌরাস্তা এলাকার ফাতেমা বেগম। রোগীকে ট্রান্সমিশন বিভাগে নিয়ে পরীক্ষার পর জানানো হয়, তার রক্তের গ্রুপ ‘এ’ পজিটিভ। এরপর স্বজনেরা ‘এ’ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা ক্রস ম্যাচ করে নিশ্চিত করে, রক্তের গ্রুপ ঠিক আছে। 

২২ জুন ফাতেমার জরায়ুর অস্ত্রোপচার হয়। এক ব্যাগ রক্ত শরীরে যাওয়ার পর পরই রক্তক্ষরণ, শরীর ফুলে যাওয়া, খিঁচুনিসহ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শুরু হয় তার। কারণ জানতে না পেরে পর দিন চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন, আবার অস্ত্রোপচার করবেন। তাই আবার স্বজনদের রক্ত সংগ্রহ করতে বলা হয়। স্বজনরা এবারও তিন ব্যাগ ‘এ’ পজিটিভ রক্ত সংগ্রহ করেন। কিন্তু এবার আর ক্রস ম্যাচ হয়নি। এতে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। এরপর হাসপাতাল ও বাইরে থেকে ফাতেমার রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, তার রক্তের গ্রুপ আসলে ‘ও’ পজিটিভ। 

চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, রক্তের গ্রুপ মিস ম্যাচ হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরপর ফাতেমাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ২৯ জুন পর্যন্ত আইসিইউতে রাখার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৩০ জুন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ১০ জুলাই ভোর ৪টার দিকে ফাতেমা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

এ ঘটনায় বিভিন্ন সময় বিচারের দাবিতে হাসপাতালের সামনে অনশন কর্মসূচি করেন ফাতেমার ছেলে আব্দুলাহ আল মারুফ জিয়াম। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কোনো সুরাহা পাননি তিনি। সর্বশেষ গত ১০ অগাস্ট অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস রমেক হাসপাতাল পরির্দশন করেন। সে সময় জিয়াম তার সঙ্গে কথা বলার জন্য হাসপাতালে সকাল থেকেই অনশন কর্মসূচি নেন। ড. ইউনূস হাসপাতালে এলে জিয়ামের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় জিয়াম তার অভিযোগ তুলে ধরে বিচার চান। ড. ইউনূস সঠিক বিচার দেওয়ার আশ্বাস দিলে জিয়াম ঘরে ফিরে যান।
 
প্রজ্ঞাপন বলা হয়, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তাদেরকে তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদ ও কর্মস্থলে বদলিপূর্বক পদায়ন করা হলো। একইসঙ্গে এই দুই কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এবং জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এছাড়াও, ১১ অগাস্ট একই সচিব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে রমেক ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক জোবাইদা জান্নাত ও আইসিইউয়ের ইনচার্জ ডা. জামাল উদ্দিন মিন্টুকে ওসডি করা হয়। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হলো। চিকিৎসক জোবাইদা জান্নাত প্যাথলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন বলে জানান পরিচালক।

ভুল রক্তের গ্রুপ পুষ করায় মারা যাওয়া ফাতেমার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম বলেন, কোথাও অন্যায় হলে প্রতিবাদ করুন। কেউ না থাকলে একাই দাঁড়ান ন্যায়বিচার পাবেন। আজ আমি আমার মাকে হত্যার বিচার পেয়েছি। অশেষ ধন্যবাদ জানাই নোবেলজয়ী অন্তর্বতীকালীন সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারকে। তিনি আমার কথা শুনেছেন। আমার দাবি তিনি ইতিমধ্যে পূরণ করা শুরু করেছেন। তিনি সঠিক বিচার করেছেন। এই দুঃসময়ে বন্ধু-সহপাঠি, ছোট ভাই, বড় ভাইসহ যারা আমার পাশে ছিলেন তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। 

জানতে চাইলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনূস আলী বলেন, বদলি ওএসডি আমাদের ডাক্তারদের নৈমিত্তিক ঘটনা। এটাকে আমি কোনো নেগেটিভ ভাবে দেখি না। বদলি হওয়ার জন্য আমি নিজেই গত ছয় মাস ধরে চেষ্টা করছিলাম। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে তা হয়নি। 

তিনি বলেন, কোথায় কি ঘটেছে এটার জন্য পরিচালক কেমনে দায়ী হয়। এখানে পরিচালকের কোনো দায় নেই। যেহেতু আমি পরিচালক এটাই আমার অপরাধ। তাদের কমপ্লিনের ভিত্তিতে আমার বদলি বা ওসডি হয়নি। ফাতেমার মৃত্যুর ঘটনায় আমি দায়ী নই। ভুল চিকিৎসার জন্য আমি প্যাথলোজির ইনচার্জসহ দু'জনকে তাৎক্ষণিক বদলি করেছি। কিন্ত আমার কোনো জবানবন্দি না নিয়ে আমাকে ওএসডি করা হলো।

-এলওয়াই/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,