বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে। পুলিশ ও ট্রাফিকও চলে যায়। ফলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ দিন ধরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে প্রশংসায় ভাসছেন তারা। শিক্ষার্থীদের এই মহৎ কাজকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ভূয়সি প্রশংসা করেছেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
ছুটি দিন শুক্রবারেও (৯ আগষ্ট) সকাল থেকেই শহরের চৌরাস্তা, পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড, আমতলা মোড়, আর্ট গ্যালারী, ঠাকুরগাঁও রোডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় তাদের। এর আগে গত ৬ই আগষ্ট থেকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক না থাকায় দায়িত্ব পালন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, মুখে বাশি, রোদের কারনে মাথায় ছাতা নিয়ে স্বেচ্ছায় ও বিনা বাঁধায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। সব সময় চৌরাস্তায় যানযট লেগে থাকলেও শিক্ষার্থীদের কথা শুনছেন সাধারণ মানুষও। তবে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে ট্রাফিক আইন মানার বিষয়ে জনসচেতনতাও সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এ কারনে চৌরাস্তাসহ গুরুত্বপুর্ণ স্থানগুলোতে কোন রকম যানযট লক্ষ্য করা যায়নি।
দায়িত্বরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আনসার সদস্য, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের পক্ষ থেকেও স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যে যতটুকু সময় পারছে দায়িত্ব পালন করছে, তারপর নতুনরা এসে দায়িত্ব নিচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা পথচারিদের ও চালকদের গাড়ি ইউটার্ন নিতে নিষেধ করে ট্রাফিক আইন মানার জন্য অনুরোধ করছেন। বিশেষ করে হেলমেটবিহীন মটরসাইকেল চালকদের অনুরোধ করছেন হেলমেট পরে গাড়ি চালানোর জন্য। এ বিষয়গুলো স্ব-চোক্ষে চিত্র গুলো দেখার জন্য সাধারণ মানুষও দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন।
শহরের চৌরাায় বেলা ১১টায় টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আদর, গালিব, রাতুল, আবির, তুষার, নিশাত, আরমান, রোহান, আবির সিনিয়রসহ বেশকিছু শিক্ষার্থী ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন। সাথে বেশ কয়েকজন আনসার সদস্যও দায়িত্ব পালন করছেন।
মো: কুরবান আলী নামে এক অটো চালকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, খুবই ভালো কাজ করছে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা। আর এই শিক্ষার্থীদের আমরাও সহযোগিতা করছি। তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাধ জানাই।
আদনান বখত চৌধুরি রোহান নামের আরেক শিক্ষার্থী জানায়, সড়কে যেন যানজট ও বিশৃঙ্খলা না হয়, সেজন্য আমরা স্বেচ্ছায় কাজ করছি। আশা রাখি খুব শিগগির দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করে এই শিক্ষার্থী।
আসিফ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মাঠে এখন ট্রাফিক পুলিশ নেই। এজন্য সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা কাজ করছি। যতদিন ট্রাফিক পুলিশ তাদের দায়িত্বে না ফিরবে, ততদিন আমরা এই দায়িত্ব পালন করে যাবো বলেও জানায় এই শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদ জানান, শিক্ষার্থীরা অনেক ভাল ও মহৎ একটি কাজ করছে। পুলিশকে ও ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতার মাধ্যম্যে শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতিকে সহযোগিতার যে বার্তা দিচ্ছে সেটা সত্যিই অনন্য।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক প্রফেসর মনতোষ কুমার দে বলেন, শিক্ষার্থীরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যে কাজ করছে তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। আর তরুণ ও নতুন প্রজন্ম সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যেভাবে সহযোগিতা করছে তা নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা দেশকে ভালোবেসে যে ধরণের কাজ করছে তা সত্যিই অনুকরণীয় বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়াত হোসেন বলেন, চলমান পরিস্থিতি সবাই যেন শান্ত ও স্বাভাবিক থাকে, সে জন্য আমরা সকলে কাজ করছি। আর শিক্ষার্থীরা যেভাবে নাশকতা ঠেকাতে এগিয়ে এসেছে এবং তারা যেভাবে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে তা সত্যিই গর্বের ও প্রশংসার। তেমনি শিক্ষার্থীদের মতো সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই বলেও জানান তিনি।
এএ/এসআর