ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ইসলামী রাজনীতিবীদ মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল হোসাইন বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, সামাজিক উদ্যোক্তা, সমাজসেবক ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। তিনিই সর্বপ্রথম বাংলাদেশী হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রবর্তনের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
বৃহস্পতিবার পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবদান নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ইসমাইল হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের তরুণ উদীয়মান ছাত্র সমাজ বাংলার বুকে যে অসামান্য অবদান রেখেছে তা দেখে বাংলার সকল শ্রেণীর মানুষ সারাজীবন মনে রাখবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা প্রত্যাহার ও সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ১৬০ জনের বেশি বিশ্ব নেতা। সেই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনও ছিলেন।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের বাংলাদেশের গর্ব। তিনি বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের বিশ্ব গরীবের বন্ধু। এবং বাংলাদেশের উচ্চ সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও পিএইচডি ডিগ্রীধারী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলার নিরীহ খেঁটে খাওয়া মানুষের দূরদশা দেখে তিনি তাদের পাশে কীভাবে থাকতে পারেন, তা ভাবেন। তিনি বুঝতে পারেন স্বল্প পরিমাণে ঋণ দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। সে জন্য তিনি ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প চালু করেন। এ জন্য তাকে গরীবের বন্ধু বলা হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছেন তার অনেক প্রকল্পের মাধ্যমে।
তিনি আরো বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মাননা। তিনি প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পান। পরে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম এবং ২০১০ সালে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পান। বিশ্বের সাত জন ব্যক্তির মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস হলেন একজন, যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
ইসমাইল হোসাইন বলেন, ২০২০ সালে তিনি ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি থেকে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। ১৯৭১ সালে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ও আন্তর্জাতিকসহ প্রায় ১৪৫টি পুরস্কার অর্জন করেছেন।
তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার, (ফিলিপাইন); ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, (বাংলাদেশ); ১৯৯৮ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার; ২০০৪ সালে ফিলাডেলফিয়ার হোয়ার্টন স্কুল অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব পেন্সিলভেনিয়া তাকে গত ২৫ বছরে ২৫ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হিসেবে নির্বাচন করে; ২০০৬ সালে তার অর্থনৈতিক কাজের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার; ২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে শীর্ষ ১২ জন ব্যবসায়িক নেতার মধ্যে স্থান দেয়, তাকে এশিয়ার ৬০ বছরের নায়কদের মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত করে।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যুক্তরাজ্যের ‘প্রসপেক্ট ম্যাগাজিন’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফরেন পলিসি’ কর্তৃক পরিচালিত একটি উন্মুক্ত অনলাইন জরিপে শীর্ষ ১০০ জন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দেওয়া হয়; ২০০৯ সালে ইউনূস স্লোভাকিয়ার ইনফরমাল ইকোনমিক ফোরাম ইকোনমিক ক্লাব দ্বারা প্রদত্ত সর্বোচ্চ পুরস্কার গোল্ডেন বিয়াটেক অ্যাওয়ার্ড পান; ২০২১ সালে ইউনূস ক্রীড়া (ইউনূস স্পোর্টস হাবের মাধ্যমে) উন্নয়নের জন্য তার বিস্তৃত কাজের জন্য অলিম্পিক লরেল পুরস্কার পান; ২০২১ সালে ইউনূসকে ইউনাইটেড নেশনস ফাউন্ডেশনের চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেঞ্জ পুরস্কার দেওয়া হয়।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবীদ হাফেজ মাওলানা মুফতী মোস্তফা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামীক চিন্তাবীদ ড. মোশাররফ হোসাইন, পীরে কামেল আলহাজ্ব আবুল খায়ের মোহাম্মদ অহিদী ও খাঁজা মীর হারুনুর রশীদ, পীর সাহেব লক্ষীপুর, হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্, মুফতী শাহাবুদ্দিন ভূঁইয়া, হাফেজ মাওলানা মুফতী জহিরুল ইসলাম, খতীব মুফতী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ প্রমুখ।
-এমএ