For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

মেঘনা নদী ভাঙনে নিঃস্ব তিন শতাধিক পরিবার

Published : Monday, 29 July, 2024 at 7:03 PM Count : 73

চারদিকে মেঘনা নদী পরিবেষ্টিত এক এলাকার নাম নুনেরটেক। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বারদী ইউনিয়নে এর অবস্থান। ৬টি গ্রাম নিয়ে একটি ওয়ার্ড নুনেরটেক। এ ওয়ার্ডের মেঘনা নদী ঘেঁষা সবুজবাগ টেকপাড়া গ্রাম। মেঘনা নদীতে মাছ ধরা এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের পেশা। নদী ভাঙ্গন আতংঙ্কে সবুজবাগ টেকপাড়া গ্রামের মানুষের দিনকাটে। দীর্ঘ ৩২ বছরে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এ গ্রামে নিঃস্ব হয়েছেন তিন শতাধিক পরিবার। বর্তমানেও প্রায় ১২টি পরিবার নদী ভাঙ্গনের আতংকের রয়েছেন। নদী ভাঙনের অনেকেই এ গ্রাম ছেড়ে শহর বা অন্য কোন উপজেলায় ভাড়াটিয়া হয়ে বসবাস করছেন। কেউ কেউ নিজের জমি নদী ভাঙ্গনে হারিয়ে অন্যের জমিতে ঘর বেঁধেছেন। এ বর্ষা মওসুমে মেঘনা নদীর ঢেউ ও প্রচন্ড স্রোত ওই এলাকার মানুষের বাড়িঘর ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙ্গা এলাকাবাসী নদীর তীরের বাড়িঘর রক্ষা করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন। তবে ১৯৯১ সাল থেকে বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি আসে। কিন্তু ২০২৪ সালেও তার বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে সোনারগাঁয়ের নুনেরটেক এলাকার সবুজবাগ টেকপাড়া গ্রামে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। ওই সময়ে বিএনপির সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টির সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা ও বর্তমান আওয়ামীলীগের দলীয় সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের কোন বাস্তবায়ন হয়নি। গত শুক্রবার সকালে নুনেরটেক সবুজবাগ এলাকায় নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান বর্তমান সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাকিবুল রাজিবসহ আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতারা। পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। সেখানেও সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার স্থানীয়ভাবে বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে নদীর ভাঙ্গন রোধে বাঁধ নির্মাণের এলাকাবাসীকে বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখেনি। ভাঙ্গনের কারণ হিসেবে নদীর প্রচন্ড ঢেউ, স্রোত ও অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলনকে দায়ী করেছেন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গনের ফলে মানুষের ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিগত ৩২ বছরে ওই এলাকার প্রায় হাজার বিঘা ফসলি জমি ও তিন শতাধিক মানুষের বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে বহু বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি। নদী ভাঙন তীরে মানববন্ধন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের স্মারকলিপি দিয়েছি। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি। 
 
সরেজমিন নুনেরটেক সবুজবাগ টেকপাড়া এলাকায় গেলে কয়েকজন নারী পুরুষ জানান, গত কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় উচ্চ আদালতের আদেশে মেঘনা নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। নদীতে প্রচন্ড স্রোত ও ঢেউয়ের কারণে তিনটি বাড়ি ভেঙ্গে নদীর গর্ভে চলে গেছে। বর্তমানে ৫-৭টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়ে আছে। যেকোন মূহুর্তে নদী গর্ভে চলে যেতে পারে।

নুনেরটেক সবুজবাগ গ্রামের জজ মিয়া বলেন, নদী ভাঙ্গন আমাদের গুরুত্বপূর্ন সমস্যা। নদীতে প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের ঘর বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে আরো ২০-৩০টি পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। অনেকেই দেখতে এসে আপসোস করেন। কেউ কেউ বাঁধ দিয়ে ভাঙন রোধে কাজ করার আশ্বাস দেন। কোন বাস্তবায়ন দেখি না। নদী ভাঙনে শিকার হয়ে অনেকে ঢাকা বা পাশ্ববর্তী উপজেলায় ভাড়াটিয়া হয়ে বসবাস করছেন।
৫২ বছর বয়সী আলিমুন নেছা জানান, বিয়ের পর থেকে এ গ্রামের বউ হয়ে এসেছি। আমার জীবনে ঘর বাড়ি ৭ লাড়া (৭ বার পরিবর্তন) করেছি। নদীতে ঘর বাড়ি ভাঙে আর পেছনে যাচ্ছি। এখন পরের জমিতে ঘর করে আছি। সরকার বাঁধ নির্মাণ করে দিলে হয়তো আর নদীতে কারো বাড়িঘর চলে যাবে না। দ্রুত বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই।

বারদী ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য ওসমান গণি জানান, বাড়িঘর নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হলে নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এলাকাবাসী বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রতি পেলেও বাস্তবায়ন হয়নি।

বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবুর রহমান বাবুল জানান, নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে বাঁধ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। সাংসদের কাছ থেকে ডিও লেটার নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। শুক্রবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন কবলিত মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন সমস্যা সমাধান করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাকিবুল রাজিব বলেন, সাংসদ মহোদয়কে সঙ্গে নিয়ে নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে সাময়িকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শুষ্ক মৌসুমে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধান করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন কারনে নদী ভাঙ্গন সমস্যার সমাধান হয়নি। তবে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হবে।

এইচএমআর/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,