For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

উপযোগী পরিবেশেও ডিম ফোটানো যাচ্ছে না বিলুপ্তপ্রায় ঘড়িয়ালের

Published : Sunday, 14 July, 2024 at 2:45 PM Count : 101

রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেনে রাখা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ঘড়িয়াল আবারও ডিম দিয়েছে। সাত বছর আগে ২০১৭ সালে দুটি ঘড়িয়ালের জুটি বাঁধানো হয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল ঘড়িয়ালটি ডিম দেবে। এর মধ্য দিয়ে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিটির বংশবিস্তার ঘটবে। এ জন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে ঘড়িয়ালের প্রজনন উপযোগী পরিবেশও তৈরি করা হয়। তবে ৬ দফা ডিম দিলেও কোনো ভাবেই ডিম ফোটানো যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদের দিয়ে প্রজনন না করানো গেলে দেশে এই প্রাণীটি একেবারেই বিলুপ্ত ঘোষিত হবে। তবে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে আবারও চেষ্টা করানো হচ্ছে ঘড়িয়ালের বংশ বিস্তারে।

রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান উদ্যানে কর্মরত বারব আলী ও শরিফুল ইসলাম জানান, ১৯৯০ সালে রাজশাহীর পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া ঘড়িয়াল এই উদ্যানে রাখা হয়। তবে সেই দুটি নারী প্রজাতির হওয়ায় পদ্মা নামের একটি ঘড়িয়ালকে রেখে অন্যটিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। এর বিনিময়ে ২০১৭ সালে ঢাকা থেকে আনা হয় গড়াই নামে একটি নর ঘড়িয়ালকে।

তারা আরও জানান, দীর্ঘ সময়ের পর তাদের দাম্পত্য সখ্যতা হয়েছে। এতে অন্তত ৬ দফায় ডিমও দিয়েছে পদ্মা। তবে সেগুলো কোনো ভাবেই বাচ্চা ফোটানো যায়নি। অধিকাংশই পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। চলতি বছরও মার্চ মাসের দিকে অন্তত ৩২টি ডিম দিয়েছে পদ্মা। তবে সেগুলো পানিতে। ফলে নষ্ট হয়ে ভেসে উঠছে ডিমগুলো। এর আগেও একই ভাবে ঘড়িয়ালের ডিমগুলো নষ্ট হয়েছে।
তবে গত বছর অল্প কিছু ডিম পানির পাশে বালুতে পাওয়া গিয়েছিলো। সেগুলো খুব সতর্কতার সাথে বালুতে পুতে রাখলেও ফল মেলেনি। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ঘড়িয়াল নিজেই ডিমগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে।

এদিকে, গত দুই মাস আগে ঘড়িয়ালের প্রজননের বিষয়ে কাজ করতে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নিয়েছেন সরীসৃপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রমন। তিনি বলেন, ডিম ফোটানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অভাব এখানে প্রধান সমস্যা। প্রজনন মৌসুমে, ডিম দেয়ার অন্তত তিন মাস আগে থেকেই ঘড়িয়াল পলি মিশ্রিত মাটি, নরম ঘাস রয়েছে এমন স্থান নির্বাচন করে রাখে। যেখানে দিনে তাপ থাকবে, রাতেও তাপ ধরে রাখবে। কিন্তু এখানে সেই পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে না।

তারই পরামর্শে পুকুরের এক পাশের মাটি ও ঘাস বদলানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে ঘড়িয়ালগুলোকে দর্শনার্থী থেকে আড়ালে রাখতে পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

বোরহান বিশ্বাস বলেন, গত ১০ বছরে সারাদেশের বড় নদীগুলো থেকে অন্তত ২৮টি ঘড়িয়াল উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো সব ছোট বাচ্চা। ধারণা করা যায়- বন্যার কারণে অন্য জায়গা থেকে তারা ভেসে এসেছে। এগুলো মিঠা পানির প্রাণী আর প্রাপ্ত বয়স্ক ঘড়িয়াল অনেক বড়।

তিনি আশা করছেন, প্রজননে সফল হলে নদীতে এদের ছেড়ে দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। তবে তার আগে নিরাপদ নদী ও দূষণমুক্ত নদী গড়ার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। তার মতে, এখান থেকে দুটি ঘড়িয়ালের বাচ্চা উৎপাদন করা গেলেও আগামী অর্ধশত বছরের জন্য প্রাণীটি দেশে টিকে থাকবে।

জানা গেছে, ঘড়িয়ালের গড় আয়ূ অন্তত ৬০ বছর। এরা সর্বাধিক ২০ ফুট লম্বা এবং ১৬০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। বয়স্করা কালচে ধূসর হলেও বাচ্চা ঘড়িয়ালের রঙ উজ্জ্বল। মার্চ ও এপ্রিল ঘড়িয়ালের প্রজনন ঋতু। এ সময়ে মা প্রাণীটি নদীর বালিয়াড়িতে ডিম পেড়ে বালি দিয়ে ঢেকে রাখে। একসঙ্গে এরা ২০ থেকে ৯৫টি ডিম পাড়ে। ৭১ থেকে ৯৩ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। 

রাজশাহীর পদ্মা এবং গড়াইয়ের বয়স অন্তত ৪০ বছর। ফারাক্কা বাঁধ তৈরির আগে রাজশাহীর পদ্মায় দেখা মিলতো মিঠা পানির ঘড়িয়ালের। পরে নদীতে রুক্ষতা দেখা দেয়ায় ক্রমেই বিলুপ্ত হয় প্রাণীটি।

-আরএইচ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,