পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক এখন আর আবর্জনা নয়। ব্যবহার ও প্রয়োজনের পর সাধারণত ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের সামগ্রীকে কেন্দ্র করে ভোলার চরফ্যাশনের কুতুবগঞ্জে ও মুখারবান্ধা নামক জাগায় গড়ে উঠেছে পৃথক প্লাস্টিকের কারখানা। আর এই প্লাস্টিকের কারখানায় দরিদ্র, বেকার অসহায় নারী-পুরুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
এতে কারখানার মালিক নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি তৈরি করেছেন ৫০ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খাতের আরও বিকাশ সম্ভব বলে জানান কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা।
চরফ্যাশন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজার, ছোট ক্ষুদ্র্র ব্যবসায়ীরা গ্রামে ঘুরে ব্যবহারের পরে ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের বোতল ও ভাঙ্গাড়ি এনে এখানে জমা করছেন। আর কারখানার মালিকরা এগুলো কিনে বাছাই করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন ৪০ টাকা কেজি দরে।
শনিবার সকালে চরফ্যাশনের পৌর এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের কুতুবগঞ্জে প্লাস্টিকের কারখানায় ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা। কেউ বোতল পানিতে ধুয়ে কাটিং করে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউবা বোতলগুলোর ছিপি খুলছেন। প্রতিদিন ৫০ জন
নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন এই প্লাস্টিক কারখানায়।
কারখানায় কাজের ফাঁকে কথা হয় রিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, সংসারে অভাব-অনটন ও স্বামীর একার আয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়ে। তাই এই কারখানায় কাজ করছেন। দুই বেলা খাবারসহ মাস শেষে পাঁচ হাজার টাকা পান তিনি।
রিনা আক্তারের মতো প্লাস্টিকের কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২৫ জন নারীর। কোনো ধরনের কাজ না থাকায় প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ করতে পেরে বেকারত্ব দূর হয়েছে বলে জানান শ্রমিক সালাউদ্দিন ও শফিউল্লাহ।
কারখানার মালিক শরিফ জানান, উপজেলার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও শহরের আনাচ-কানাচে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে বোতল কেনেন প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে। অন্যান্য প্লাস্টিক সামগ্রী কেনেন ৩৫ টাকা কেজি দরে। পরে এখানে বাছাই করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে কেঁকড়া সুতা জগ, চেয়ার বালতিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। শুধু তাই নয়, রিসাইক্লিং করা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রপ্তানি করা হচ্ছে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
তিনি জানান, এতে একদিকে যেমন রোধ হচ্ছে পরিবেশ দূষণ অপরদিকে তৈরি হয়েছে বেকারদের কর্মসংস্থান। এই কারখানায় চরফ্যাশনের দরিদ্র, বেকার নারী-পুরুষদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ায় অনেকের সংসারের অভাব দূর হচ্ছে। এখানে
প্রায় ৫০ জন নারী পুরুষ কাজ করেন। মাস শেষে বিভিন্ন স্তরে পাঁচ হাজার করে প্রদান করা হয়। গ্রামের নারীরা এ কাজে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
বাচ্চু মহাজন নামের আরেক প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী জানান, পথে-ঘাটে এবং নালা-নর্দমায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে এনে এগুলো পরিষ্কার করে আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় প্লাস্টিকের গুটি। এরপর নতুন করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় নানা পণ্য।
এখানে দুই-তিন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকে। পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবেশের উপকার করছে দাবি করে নুরউদ্দিন নামের আরেক প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী জানান, কোটি কোটি বোতলসহ প্লাস্টিক বর্জ্য যদি খাল, নদী দখল করত,
তা হলে তা পলিথিনের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠত। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী- চরফ্যাশন উপজেলায় ১০০ জনের মত প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী রয়েছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর ভোলার পরিদর্শক (ভোলা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) তোতা মিয়া জানান, যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক দ্রব্য পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এ ক্ষেত্রে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করায় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এ এলাকা রক্ষা পাচ্ছে।
চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরীন হক জানান, সস্তা আর সহজলভ্য হওয়াতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই প্লাস্টিকের সামগ্রী। ব্যবহারের পর মানুষের অসচেতনায় যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছেন। এতে করে পরিবেশ নষ্ট হয়।
কিন্তু চরফ্যাশনে প্লাস্টিকের কারখানা হওয়ার কর্মসংস্থানের কারণে এখানকার সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হয়েছে।
-এসএফ/এমএ