নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে তিন গ্রামের শতাধিক পরিবার মাছ ধরার বাঁশের চাঁই তৈরি করে স্বচ্ছল। তাদের একমাত্র উপার্জন চাঁই তৈরিতে। এখন বর্ষা মওসুম। চাঁইয়ের চাহিদা বেশি। তাই সোনারগাঁয়ের তিন গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ চাঁই তৈরি পেশায় তেমন কোনো আয় না থাকলেও এ পেশাকেই আঁকড়ে ধরে খুশি পরিবারগুলো। এ পেশাকে কেউ কেউ শিল্পও বলে থাকেন। এ পেশা ছেড়ে অনেকে অন্য পেশায় গেলেও ওই পরিবারগুলো বাপ-দাদার ধরে রাখা এ পেশা ছেড়ে যাননি। এ শিল্পে বেশির ভাগ কারিগরই হলো নারী। সংসার সামলিয়ে ঘরে বসে এ কাজের মাধ্যমে তারা বাড়তি আয় করে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ভূমিকা পালন করছেন। এ ছাড়াও স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও মা-বাবাকে এ শিল্পে সহযোগিতা করছে।
জানা যায়, উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভার সাহাপুর ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়া পাড়া ও রামগঞ্জ গ্রামের শতাধিক পরিবার চাঁই তৈরির পেশায় জড়িত। সারা বছর চাঁই তৈরি করা হলেও বর্ষা মওসুমে চাঁইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সোনারগাঁওয়ের চাঁই শুধু সোনারগাঁওয়েই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন চাঁই কারিগরা। তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ চাঁই তৈরি করা। চাঁই তৈরির সময় চুলায় ভাত বসিয়ে নারীরা কাজ করেন।
অনাথ দাস, হরে কৃষ্ণ সরকার, সনদ সরকার, রণজিৎ সরকার, জোকেশ দাস,মরন দাস এরা সবাই চাই তৈরির কারিগর। সবার বাড়ি উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভার সাহাপুর, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়া পাড়া ও রামগঞ্জের বাসিন্দা। তারা জানালেন তাদের চাঁই তৈরির জীবনযাপনের কথা। এ তিন গ্রামের শতাধিক পরিবার চিংড়ির চাঁই তৈরি করে উপার্জন করছে। সারা বছর এ চাঁইয়ের চাহিদা থাকায় তাদের সবসময় কাজ করতে হয়। তবে বর্ষার সময় একটু চাহিদা বেশি থাকে।
সোনারগাঁও পৌরসভার সাহাপুর গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগর সনদ সরকার জানান, রকাই জাতের মুলি বাঁশ দিয়ে চাঁই তৈরি করা হয়। এ বাঁশ চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে আনা হয়। একটি মুলি বাঁশ দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরার চারটি চাঁই হয়। এ গ্রামে চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ ধরার জন্য চার ধরনের চাঁই তৈরি করা হয়। চাঁই বানানোর প্রধান কাঁচামাল হলো বাঁশ ও সুতা। বিভিন্ন মাপে বাঁশের শলা কেটে রোদে শুকিয়ে তার পর শুরু হয় চাঁই তৈরির কাজ। একটি চাঁই তৈরির জন্য প্রায় ৮টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। সোনারগাঁওয়ের আনন্দবাজার ও কাইকারটেক হাটে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা চাঁই কিনতে আসেন।
চাঁইয়ের কারিগর করবী রানী সরকার জানান, বর্তমানে চাঁই তৈরির কাজে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। ফলে সংসারে সচ্ছলতায় ভূমিকার রাখছেন নারীরা। পুরো বছরই এ গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার চাঁই বানিয়ে থাকে। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীও এ কাজে সহযোগিতা করে।
চাঁই তৈরির কারিগর সাতভাইয়াপাড়ার রণজিৎ সরকার, জোকেশ দাস, মরন দাস ও রামগঞ্জ গ্রামের বানু সরকার ও মনোরঞ্জন দাস জানান, অন্যান্য মাছের চাঁইয়ের চেয়ে চিড়িং মাছের চাঁইয়ের চাহিদা বেশি। সোনারগাঁও ছাড়াও পটুয়াখালী, ফরিদপুর, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার মানুষ অর্ডার দিয়ে এখানে চাঁই কিনতে আসেন। তারা আরো বলেন, সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আরো প্রসার ঘটতো এ শিল্পের।
বৈদ্যেরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সূচনা রানী জানান, মা-বাবাকে সহযোগিতার জন্য সে চাঁই তৈরির কাজ করে। স্কুল বন্ধ থাকলে তার মা বাবাকে এ সহযোগিতা করে থাকে। তা সহযোগিতার ফলে অন্য কোন শ্রমিক কাজে নিতে হয় না।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, বাশেঁর তৈরি চাঁই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
এইচএমআর/এসআর