ভারত থেকে বন্যার পানি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হঠাৎ করেই ফুলে ফেঁপে উঠেছে পদ্মা। হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে
রাজশাহীর চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গিয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে চাষিরা।
কয়েকদিনে রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা পয়েন্টও বেড়েছে পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী গত বুধবার রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ৭২ মিটার।
মহানগরীর শেখপাড়া এলাকার হাসান ইমাম জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই পদ্মায় পানি বেড়েছে। নদীর মাঝে জেগে উঠা ছোট ছোট চরগুলো ডুবে গেছে। পানি এসে ঠেকেছে বাঁধের ব্লকে।
এদিকে, পদ্মার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে যেতে শুরু করেছে শত শত বিঘা বিঘা জমির ফসল। গত সোমবার রাত থেকে পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার চরে ফসলের ক্ষেতগুলো তলিয়ে যেতে থাকে।
ইতোমধ্যে পানিতে বাদাম ও তিলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলার কথা থাকলেও পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ১৫০ কৃষকের স্বপ্ন। উজান থেকে আসা পানি লোকালয়ে ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
বাঘা উপজেলার কালিদাসখালি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সহিদুল ইসলাম জানান, ৩২ বিঘা বাদামের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গেছে তার। আর কয়েকদিনের মধ্যে ফসল ঘরে উঠতো। ক্ষতির দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
কৃষক রাজা শেখ জানান, তারসহ ১৫০ জন কৃষকের ৬০০ থেকে ৭০০ বিঘা জমির বাতাম ফসল দিনের মধ্যে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আবাদ করা ৪ থেকে ৫ বিঘা তিল ফসলও তলিয়ে গেছে।
চকরাজাপুর, কালিদাশখালি ও লক্ষীনগর এলাকায় চরাঞ্চলে জেগে উঠা পদ্মার চরে এক হাজার বিঘা জমিতে বাদাম আবাদ করেছিলেন এসব কৃষকরা। পদ্মায় পানি আসায় ৬০০ থেকে ৭০০ বিঘা জমির বাদাম ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে।
উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনগর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলু সেখ জানান, বন্যার কারণে ক্ষতির শিকার হয়েছেন কৃষকরা। অনেকেই তলিয়ে যাওয়া অপরিপক্ক বাদাম তুলেছেন। সেটাতেও লাভ হবেনা, কারণ পানিতে বাদাম পচে যায়।
পদ্মার ১৫টি চরে প্রায় ২০ শত মানুষের বসবাস করে। পরিবার রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। মানিকের চরের প্রায় প্রতিটি পরিবারই অন্যের জমি বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে বাড়ি করে বসবাস করে। স্থানীয় বাদাম চাষি বাবুল শেখ বলেন, মানিকের চরে ৬ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এরমধ্যে তিন বিঘার বাদাম উঠাতে পারলেও আরও তিন বিঘার বাদাম উঠানোর আগেই পদ্মায় পানিতে ডুবে গেছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, পদ্মার নদীর জেগে উঠা চকরাজাপুর, কালিদাশখালি চরে বন্যার পানি ভারত থেকে আসায় এলাকার বাদাম ও তিল তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা করা হচ্ছে।
রাজশাহীর পাউবোর নিবার্হী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ মিটার। গত বুধবার পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ৭২ মিটার।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চলতি মৌসুমে চরে ৪৭৩ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ক্ষতি বেশি হবে। কৃষকের ফসলের ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম জানান, সব ধরনের বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে যেখানে প্রয়োজন হবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরএইচএফ/এসআর