বেহাল সড়কে জনদুর্ভোগ চরমে, ২০ বছরেও লাগেনি ইটপাথরের ছোঁয়া
Published : Monday, 1 July, 2024 at 7:16 PM Count : 299
নওগাঁর পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলার কাটাবাড়ি মোড় হতে বিলছাড়া স্কুল মাঠ পর্যন্ত গ্রামীণ মেঠো রাস্তার বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। মাটির রাস্তা তৈরীর সময়কাল ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ইট পাথরের ছোঁয়া লাগেনি এই গ্রামীণ রাস্তাটিতে। আশপাশের সকল গ্রামীণ সড়কগুলো পাকা হলেও অজানা কারণে এই রাস্তার উন্নয়ন হয়নি। খরা মৌসুমে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। বর্তমানে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী দুটি ইউনিয়নের ৮/১০ টি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়তই দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়াও একটি উচ্চ বিদ্যালয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাগ্রহীতারা এই রাস্তায় চলাচল করেন। বর্ষা মৌসুমে রাস্তার কাদায় অনেকে স্কুলে যেতে পারেনা, ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হয়। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ মেঠো পথে দ্রুত ইট পাথরের ছোঁয়া চান স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিনিয়ত কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা এই কাঁচা রাস্তাটি দিয়ে পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলা শহরে যাতায়াত করেন। রাস্তার কারণে কোন যানবাহন চলাচল করতে চান না। আর যানবাহন তো দুরের কথা পায়ে হেটে চলাই মুশকিল হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে রাতে কেউ এই এলাকায় আসতেও পারে না।
অপরদিকে ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বিখ্যাত এই অঞ্চল। আধুনিক সড়ক না থাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে খরচ অনেক বেশি হয়। এ কারণে নায্য মূল্য থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। দেশের অনেক গ্রাম এখন শহরের সুবিধা পাচ্ছে, কিন্তু কাঁটাবাড়ি মোড় হতে বিলছাড়া গ্রাম অভিমুখী এই কাঁচা রাস্তাটি এখনও যেন উন্নয়ন সফলতার ক্ষেত্রে বিষফোঁড়া হয়ে নিজের অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে। এমন বৈষম্য থেকে দ্রুত মুক্তি চান এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।
বিলছাড়া গ্রামের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসা ডা. হারুন অর রশিদ আক্ষেপ করে বলেন, এই অঞ্চলে আমরা যারা বসবাস করি তারা মনে হয় ছিটমহলের বাসিন্দা। যার কারণে আমরা স্বাধীন ভূমিতে থেকেও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। বর্ষা মৌসুমে এই মেঠোপথ দিয়ে চলাচল করতে কি পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয় তা আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না।
পদ্মপুকুর গ্রামের বাসিন্দা ইসরাফিল ইসলাম বলেন, আমাদের মহাদেবপুরর এমপি মহোদয় অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েও হয়নি। এখন মন্ত্রী মহোদয় কি করবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমাদের আকুল আবেদন, অতি শীঘ্রই যেন এই রাস্তাটি সংস্কার করে এই জনদুর্ভোগ থেকে উদ্ধার করে। আমরা যেন চলাচলের উপযোগী একটা রাস্তা পাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এই রাস্তাটা আমাদের আশু প্রয়োজন।
রাস্তায় চলাচলকারী আরও একাধিক ব্যক্তি বলেন, আধুনিক চলাচল ব্যবস্থার অভাবে আমরা এখনো আদিম যুগে বসবাস করছি। বাংলাদেশের মানুষ এখন ডিজিটাল পেরিয়ে স্মার্ট নাগরিক সেবা ভোগ করছে আর আমরা যেন সেই ৮০, ৯০ দশকের এনালগ যুগেই পড়ে আছে। এই মেঠোপথে কোন দিন কোন কর্মকর্তারা এসে খোঁজ নেননি। ভোটের সময় এলেই জনপ্রতিনিধি আর নেতারা এসে মাপযোগ করে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন। ভোট পার হলে ভুলে যান। ভালো রাস্তা না থাকার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়ে হয় না। বর-কনে দেখতে এসে রাস্তা দেখে সমন্ধ ভেঙে যায়, মনে হয় আমরা সৃষ্টিকর্তার অভিশপ্ত মানুষ হয়ে এই অঞ্চলে জন্ম নিয়েছি। জানি না শেখ হাসিনার ডিজিটাল আমলে আমাদের এই মেঠোপথে ইট পাথরের ছোঁয়া স্পর্শ করবে কিনা।
বিলছাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র পদ্মপুকুর গ্রামের জাহেদ, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী রাহিমাপুর গ্রামের রাবেয়া ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সীমাসহ অনেক শিক্ষার্থী জানান, বর্ষার সময় এই রাস্তায় যেতে খুব কষ্ট হয়, কাদায় হেটে যেতে পারিনা পা আটকে যায়। কাঁদার মধ্যে বইয়ের ব্যাগ পড়ে যায় এ জন্য অনেক সময় স্কুল মিস হয়ে যায়। রাস্তাটি পাকা হলে আমরা কোনদিনও স্কুল গাবি করবো না।
মহাদেবপুর উপজেলা প্রকৌশলী সৈকত দাস বলেন, মহাদেবপুরের অংশের দেড় কিলোমিটার রাস্তার জন্য কাগজপত্র নওগাঁ পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে টেন্ডার হবে।
পত্নীতলা উপজেলা প্রকৌশলী ইমতিয়াজ জাহিরুল বলেন, ওই রাস্তাটা সামনে টেন্ডারে যাবে। প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে আমাদের সাইটটা কাজ শুরু হবে।
আরআর/এসআর