সাদিক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা, সাভার ডেইরী ফার্মে দুদকের অভিযান
Published : Monday, 1 July, 2024 at 6:07 PM Count : 116
ছাগল কান্ডে আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগে সাভারে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে, কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দরপত্র জালিয়াতিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন দুদক কর্মকর্তারা।
সোমবার দুপুরে দুদকের সহকারি পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সাভারে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অনুসন্ধান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৯ সদস্যের একটি দল।
দুদক জানায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে করোনা মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে শাহিওয়াল গরুর নাম দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে আমদানি করা সাদিক অ্যাগ্রোর ১৮টি নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ে। গরু আমদানীর জন্য সাদিক অ্যাগ্রো তিনটি জাল নথি জমা দিয়েছিল। নথিগুলো হলো- গবাদিপশু আমদানি-সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র, যার প্রতিটিকেই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন শুল্ক কর্মকর্তারা। সেসময় গরু আমদানির বৈধ কাগজ উপস্থাপন করতে পারেননি সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। চলতি বছরের শুরুতে কোন প্রক্রিয়ায় সরকারের এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরু সাদিক অ্যাগ্রোকে দেয়া হয়েছে, সেটিসহ অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুদকের টিম।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০২১ সালে অবৈধভাবে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করে সাদিক অ্যাগ্রো। সেগুলো পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হলেও গত এপ্রিলে রমজান মাসে কয়েকটি শর্ত দিয়ে গরু জবাই করে বিক্রির দায়িত্ব নেন সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদে একই রকমের গরু বিক্রির অভিযোগ পাওয় যায় সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে। তাই সাদিক অ্যাগ্রোকে দেয়া ব্রাহমা গরুগুলো জবাই না করে প্রদর্শন করে বিক্রি করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এছাড়া ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে প্রকাশ্যে ইমরান ব্রাহমা জাতের নিষিদ্ধ গরু উঠিয়েছিলেন। এসব গরু কোথা থেকে আসলো সেই তথ্যের খোঁজেই সোমবার সাভার কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। পাশাপাশি সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে এখানকার কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাদিক অ্যাগ্রোর কর্নধার ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দেশে নিষিদ্ধ গরু আমদানিসহ কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে জব্দ থাকা ব্রাহমা গরুগুলো প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিজের আয়ত্বে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত রমজানে এসব গরু ২৮০ টাকা মূল্যে মাংস বিক্রি করার শর্তে ইমরানকে দেওয়া হয়েছিল। তবে ইমরান সুলভ মূল্যে বিক্রি না করেই গরুগুলো তার খামারে রেখে দেন। এছাড়াও নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে সংগ্রহ করে কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বাজারে তোলে বলে অভিযোগ ওঠে।
প্রসঙ্গতঃ গত রমজান মাস উপলক্ষে সুলভ মূল্যের মাংস বিক্রির জন্য অবৈধ প্রক্রিয়ায় আমদানি করা জব্দকৃত ব্রাহমা জাতের গরুর মাংস বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে নিলামে উচ্চ বংশীয় গরু বলে সেগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে যান সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় সরকারের এই প্রতিষ্ঠান থেকে ব্রাহমা জাতের গরুগুলো সাদিক অ্যাগ্রোকে দেওয়া হয়েছে, সেসবসহ অন্যান্য বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে দুদক।
ওএফ/এসআর