সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের কর্তা ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার এক ইউপি মেম্বর।
অভিযুক্ত মো. জহুরুল ইসলাম উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের (হাজিপুর) মেম্বার। হাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম এলাকায় জহির নামে পরিচিত।
ভুক্তভোগীরা জানান, যশোরের নওয়াপাড়া, সাতমাইল, চৌগাছা, ঝিনাইদহের মহেশপুর, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক।
যশোরের নওপাড়া জুট মিলের শ্রমিক হারুন বলেন, 'আমার মেয়েকে জনতা ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার নাম করে ১১ লাখ টাকা নিয়েছেন এই জহির। এছাড়াও এই নওয়াপাড়ার আরো চার জনের কাছ থেকে মোট ৩২ লাখ টাকা নিয়েছেন এই প্রতারক। টাকা নিয়ে তিন-চার বছর ধরে তিনি আমাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছেন।'
চৌগাছার কাবিলপুর গ্রামের মরিয়মের ছেলে ইমদাদুল। এই অসহায় মহিলার ছেলেকে ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ টাকা নিয়েছেন জহির।
জহুরুল ইসলাম চৌগাছার ফরিদা বেগমের ছেলেকে আর্মিতে চাকরি দিতে দেড় লাখ, পূড়াপাড়ার মশিয়ার রহমানের ছেলেকে বিমান বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে ১২ লাখ, জীবননগরের ঝন্টুর ভাইপোকে পুলিশে চাকরি দিতে ৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে চলেছেন জহির। একবার টাকা হাতে এলে জহিরকে
আর খুঁজে পাওয়া যায়না। তবে বিভিন্ন ভুক্তভোগী বিভিন্ন সময়ে বুদ্ধি করে জহিরের কাছ থেকে চেক ও স্ট্যাম্প করে রেখেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান ও চৌগাছার পৌর কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান।
হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে অনেকে আমার কাছে বিচারের জন্য এসেছেন। তাদের বেশির ভাগই জহিরকে আর্মি অফিসার ভেবে প্রতারিত হয়েছেন। জহিরের কথা বলার ধরণ, সুন্দর চেহারা এবং পোশাক দেখে অনেকেই তাকে আর্মি অফিসারই ভাবে। তবে আমার ইউপি সদস্য বলে ইউনিয়নে কোনো অভিযোগ নিতে পারিনি।'
কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'ফরিদা তার ছেলের আর্মিতে চাকুরির জন্য আমার সামনে জহিরকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এছাড়াও আমার কাছে জহিরের ৮ লাখ টাকার ব্যাংক চেকের একটা বিচার আছে। এই চেক তিনি যশোরের সাবমাইলের একজনকে দিয়েছিলেন।'
তবে এ সকল বিষয়ে বিশেষ করে জহির কিভাবে আর্মি অফিসার হলেন এবং কিভাবে তিনি বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং ব্যাংকে চাকরি দিচ্ছেন জানতে চাইলে মুঠোফোনে সেই ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম ওরফে জহির 'আপনার সাথে আমি পরে দেখা করে কথা বলছি' বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এদিকে সংবাদ সংগ্রহের সময় নওয়াপাড়ার শ্রমিক হারুন দুঃখ করে বলেন, 'ভাই অনেকের কাছে গিয়েছি। কেউ কথা রাখে না। সাহায্য করার কথা বলেও সাহায্য করেনা। আপনাকেও হয়তো ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চুপ করিয়ে দেবে।'
-জেডআর/এমএ