পশুর চামড়ার দাম বাড়লেও বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। রাজশাহীতে গত বছরের মতো দামে কেনাবেচা হয়েছে পশুর চামড়া। এ বছর গরুর চামড়ার দাম পাওয়া গেলেও ছাগলের চামড়ার দাম ছিল মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকা।
কোথায় কোথায় গরুর চামড়ার সাথে ফ্রিতে ছাগলের চামড়া পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। আবার পাড়া-মহল্লা ঘুরে কেনা এসব চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়তে হয় মৌসুমি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা বিক্রি করেছেন এসব চামড়া। চামড়া কেনাবেচার এমন অবস্থায় অর্থিকভাবে লোকসানের শিকার হয়েছে মৌসুমি ও ছোট ব্যবসায়ীরা। তবে পশুর চামড়ার এমন দামে অসন্তষ সাধারণ মানুষ।
তবে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চামড়ার দাম বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় বেশি দামে কেনাবেচা হয়েছে পশুর চামড়া। তবে গরুর চামড়ায় করোনা নামের এক ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। তা শতকরার হিসেবে ২০ শতাংশ হবে। এসব চামড়া ট্যানারি মালিকরা কিনতে চান না। এনিয়ে এক ধরনের লোকসানে পড়তে পারে ব্যবসায়ীরা।
গত সোমবার ইদুল আজহা দিন থেকে পাড়-মহল্লায় কোরবানি হওয়া এসব পশুর চামড়াগুলো এমন দামে কেনাবেচা হয়েছে। একই দিন বিকেলে মহানগরীর সপুরার রাজশাহী জেলা স্টেডিয়ামের সামনে কোরবানি হওয়া পশুর চামড়াগুলো সড়কে ফেলে কেনাবেচা হয়। এই চামড়াগুলো মহানগরী ছাড়াও পবা ও মোহনপুর উপজেলায় কোরবানি হওয়া বেশিরভাগ পশুর চামড়াগুলো মৌসুমে ও পাইকার ব্যবসায়ীরা মহানগরীর সপুরায় নিয়ে কেনাবেচা করে। তবে গত বছরের তুলনায় চামড়ার দাম বেশি হলেও তার প্রভাব পড়েনি বাজারে।
জানা গেছে, ইদুল আজহার দিনে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়েছে পশুর চামড়া। দ্বিতীয় দিনে অল্প পরিমাণে কেনাবেচা হয়েছে এসব চামড়া। এ বছর চামড়ার দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। তবুও পশুর চামড়ার বিক্রিতে দাম নিয়ে খুশি হতে পারছে না বেশিরভাগ বিক্রেতারা। এক বা দুই লাখ টাকার গরুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে ৭০০ টাকায়। ছোট ও মাঝারি গরুর চামড়া ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকা। আর বড় গরুর প্রতিটি চামড়া বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। গরুর চামড়া বিক্রি হলেও অধিকাংশ এলাকায় ছাগলের চামড়া কিনতে চাইনি ব্যবসায়ীরা। তারপরেও যারা কিনেছেন তারা পাঁচ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকায় ছাগলের চামড়া কিনেছেন।
মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ফেরদৌস হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা ছাগলের চামড়া কিনছে না। গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রতি পিস ছাগলের চামড়া ১০ টাকা দামে কেনা হয়েছে। কিন্তু বিক্রি করতে এসে কেনা দামও পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে ৫১ পিস খাসির চামড়ার দাম বলছে ৩০০ টাকা। এতে করে মূলধন ফিরে পাওয়া মুসকিল। লাভ তো দূরের কথা।
অপর মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, শুধুমাত্র ইদের সময়ে চামড়া কেনাবেচা করেন তিনি। কিন্তু এবার চামড়ার দাম খুবই কম। তার কাছে ছাগল, খাসি, ভেড়া মিলে ৫৩ পিস চামড়া রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এই চামড়াগুলোর দাম বলেছে মাত্র ৩০০ টাকা। চামড়ার দাম অর্ধেক বলছে। প্রতি পিস ছাগলে চামড়া ১০ টাকা দরে কেনা হয়েছে। তার সাথে নিজের ও শ্রমিক খরচ আছে। আলাদাভাবে যানবাহনের ভাড়া আছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রুবেল বলেন, খাসির চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা দামে। বাজার এমনই এজন্য আমাদের কিছু বলার নেই।
মহানগরীর বুধপাড়ায় কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির বিষয়ে কালু বলেন, ছোটখাটো অজুহাতে পশুর চামড়া ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ কম দাম দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারা গরুর চামড়াগুলো কিনেছে। তবে তারা ছাগলের চামড়া কেনেননি। তবে ছাগলের চামড়াগুলো এলাকাবাসী তাদের ফ্রিতে দিয়ে দেয়।
মহানগরীর মেহেরচন্ডি এলাকায় কথা হয় চামড়া ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, ৯ থেকে ১০ বছর ধরে গরু-ছাগলের কাঁচা চামড়ার (লবণ ছাড়া) ব্যবসা ভালো হচ্ছে না। গরুর চামড়ার দাম পাওয়া গেলেও ছাগলের চামড়ার দাম নেই। এছাড়া আড়তদারও নানা কারণ দেখিয়ে দাম নিতে চান না। তাই এবার ছাগলের চামড়া তেমন কেউ কিনতে চাচ্ছে না। যারা কোরবানি দিয়েছেন পচে দুর্গন্ধের ভয়ে বিনা টাকায় দিয়ে দিচ্ছে ছাগলের চামড়া। এবার তারা বেশিরভাগ গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, এ বছরের তুলনায় এবার চামড়ার দাম কিছুটা বেশি। তবে তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি কেনাবেচায়। তার দাবি রাজশাহীতে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায় গরুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। তবে ছাগলের চামড়ার দম কম।
তিনি বলেন, চামড়া ছাড়ানোর সময় সতর্কতার অভাবে ফুটো হয়, কেটে যায়। এতে আড়তদাররা ত্রুটিপূর্ণ এসব চামড়া কিনতে চান না। এবছর কী পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ বা কেনা-বেচা হয়েছে তার সঠিক হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি।
আরএইচএফ/এসআর