নীলফামারীর জলঢাকায় জমে ওঠছে কোরবানির পশুরহাটগুলো। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে- মানুষের উপচেপড়া ভিড়। তবে সব মানুষই ক্রেতা নয়। কেউ হাটে এসেছেন উৎসুক জনতা হিসেবে। একজন ক্রেতার পছন্দের গরু কিনতে সঙ্গে আছেন আরও ৫-৬ জন। একই ভাবে এক বিক্রেতার সঙ্গেও একাধিক ব্যক্তির পদচারণ। সেই সঙ্গে চোখে পড়ার মতো দালালের দৌরাত্ম। সবমিলে পশুর হাটগুলোতে ভিড় বাড়লেও তুলনামূলক এখনও বাড়েনি বেচা-কেনা।
সম্প্রতি উপজেলার পৌরসভার পশুর হাটসহ উপজেলার আরও বেশ কিছু হাটে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
দূর থেকে দেখলে মনে হয় জমে ওঠেছে পশুর হাট। কিন্তু হাটের ভেতর স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায় আরেক চিত্র। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতার চেয়ে তিন গুন মানুষের অবাধ বিচরণ। এমন বিচরণের কারণে সুযোগ নিচ্ছে সংঘবদ্ধ একটি দালাল চক্র। যার ফলে ঠকছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে।
এবার কোরবানির পশু বিক্রির জন্য উপজেলায় সাতটি পশুর হাট নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- পৌরসভার হাট, রাজার হাট, টেংগনমারী হাট, মীরগঞ্জ হাট, গোলমুন্ডা হাট, কৈমরাী হাট, আনছার হাট। এর মধ্যে চারটি স্থায়ী ও তিনটি অস্থায়ী হাট রয়েছে। অস্থায়ী হাটগুলো হলো- আনছার হাট, গোলমুন্ডা হাট, রাজার হাট।
এদিকে, প্রতি হাটে দালাল ও ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে ঠকার শঙ্কায় ভুগছেন। হাটে আসা দালালরা মালিকদের সঙ্গে রফাদফা করে পশু হাতে নেন। ওই দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রিত টাকা দালালদের পকেটে ঢুকছে বলে একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ।
বর্তমানে উপজেলার নিয়মিত এবং মৌসুমী হাটগুলোতে দেশি-বিদেশি, ছোট-বড় গরু-ছাগল আসছে ও বেচা-কেনা হচ্ছে। বছরব্যাপী গরু পালনকারী খামারীরা এসব হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু করছেন। ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও আর্থিক ভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা কোরবানির জন্য গরু-ছাগল ক্রয় করতে হাট-বাজারগুলোতে আসছেন। তবে এখনো জমেনি কেনা-বেচা।
পৌরসভার পশুর হাটে আসা ক্রেতা জাকির হোসেন ও বিক্রেতা খাইরুল ইসলাম বলেন, হাটে আসার সাথে সাথেই দালালদের সঙ্গে রফাদফা ছাড়া পশু বেচা-কেনা করা সম্ভব নয়। তাই তাদের কমিশন দিয়েই গরু ক্রয়-বিক্রয় করতে হয়।
রাজার হাটে আসা জামিউল জানান, এবার আমার কোরবানি দেবার সামর্থ নেই। তাই ঈদের আমেজ হিসেবে পশুর হাট দেখতে আমরা কয়েকজন এসেছি।
কৈমারী হাটের বিক্রেতা আলম মিয়া জানান, তার খামারের একটি গরু বিক্রি করতে হাটে এসেছেন। দালালের হাত থেকে রেহাই পেতে সঙ্গে নিয়েছেন আরও চার জনকে। কিন্তু গরুর দাম সন্তোষজনক না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ছেন তিনি।
মীরগঞ্জ হাটে আসা ক্রেতা বদরুল আলম জানান, এর আগের বছরগুলোতে আমি একাই একটি গরু কোরবানি দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার তা ব্যত্যয় ঘটছে। ইদানিং নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। তাই আর্থিক সংকটের কারণে এ বছর সাত জনের সমন্বয়ে (যৌথ ভাবে) একটি গরু কেনার জন্য হাটে এসেছি। আমরা সবাই গরুর দাম হাঁকাচ্ছি। তবে গরুর দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, এ উপজেলায় চাহিদা পূরণ রেখেও অতিরিক্ত কোরবানির পশু মজুদ আছে। আশা করছি, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোরবানি পশুর চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিক রাখবে। ইতোমধ্যে বিক্রয়যোগ্য হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল দল কাজ করছে।
-এইচএস/এমএ