For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাবিতে নানা জটিলতায় গবেষণায় অনীহা শিক্ষকদের, ফিরে যায় প্রকল্পের টাকা

Published : Thursday, 6 June, 2024 at 6:25 PM Count : 101

গবেষণা প্রকল্প পাওয়ার পর বিল উত্তোলনে জটিলতায় গবেষণা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। এককালে কেউ কেউ গবেষণায় বাজেটে ঘাটতির উপর দায় চাপালেও এখন গবেষণায় ব্যয় না হওয়ায় প্রতিবছরই বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে ফেরত যাচ্ছে।

এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে শুধু ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বরাদ্দের তুলনায় বেশি অর্থ ব্যয় করেছিল। এছাড়া, বাকি চার অর্থবছরেই ৪০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ অব্যয়িত ছিল।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যয় করেছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা এবং অব্যয়িত ছিল প্রায় ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ অর্থ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং প্রকৃত ব্যয় ছিল ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। অব্যয়িত ছিল ৫৭ দশমিক ৫২ শতাংশ অর্থ। ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি টাকা এবং প্রকৃত ব্যয় ছিল ২ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ব্যয় করতে পারেনি ৪৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৮ কোটি টাকা এবং প্রকৃত ব্যয় ছিল ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ব্যয় হয়নি ৪১ দশমিক ৯০ শতাংশ অর্থ।

শিক্ষকদের অভিযোগ, গবেষণার বিল উত্তোলনে বিভিন্ন জটিলতা, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার সরঞ্জাম সরবরাহের প্রশাসনের ব্যর্থতা থাকায় প্রকল্প হাতে নিতে অনাগ্রহের অন্যতম কারণ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
গবেষণার প্রক্রিয়া আরও সহজ হওয়া উচিত জানিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, যারা প্রকল্পের জন্য আবেদন করেন তাদের চিন্তা থাকে গবেষণায়, সুতরাং পেপার ওয়ার্ক করার সঙ্গে সকল ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখা এক ধরনের জটিলতা। কত শতাংশ ভ্যাট-ট্যাক্স, কত টাকার উপরে গেলে টেন্ডারে যেতে হবে, কত কমে গেলে টেন্ডারে যেতে হবে না। কোন আইটেম রিসার্চ গ্রেন্টের মাঝে থাকতে পারে, কোনটায় পারে না- এসব ব্যাপারে পরিষ্কার একটি নির্দেশনা থাকা দরকার।

তিনি আরও বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ হলো এখানে আরেকটি পক্ষ দরকার স্টোরকিপার যারা আমার পরামর্শ অনুযায়ী চলবে তারাই কাগজপত্র প্রস্তুত করবে। আমি যখন প্রজেক্ট সাবমিট করবো তখন ওই কাগজগুলোর সঙ্গে এটাও সাবমিট করবো। তখন স্বচ্ছতাও নিশ্চিত থাকে। তাহলেই গবেষণায় গতি আসে, যিনি গবেষণা করবেন উনাকে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে না। প্রক্রিয়াটি তাহলে অনেক সহজ হয়ে যাবে, আমাদের গবেষণাতেও আগ্রহ বাড়বে।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসাইন বলেন, গবেষণা খাতে খরচের হিসাবগুলো মেলানো একটি সাধারণ সমস্যা। এ খাত, সে খাত নানাবিধ হিসাবনিকাশেও জটিলতা হচ্ছে। এছাড়া গবেষণায় বরাদ্দের টাকার তুলনায় খরচ বেশি হচ্ছে। একজন রিসার্চ ডিরেক্টর দরকার যে এগুলোর দায়িত্বে থাকবে।

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. খালেদ হোসাইন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মূলত আমাদের গবেষণার আগ্রহ কমছে তবে বিল ভাউচারেও ঝামেলা হচ্ছে অস্বীকার করা যাবে না। এটা মাইনর সমস্যা, এতে আলাদা একটি বিভাগ কাজ করলে প্রক্রিয়াটি সহজ হয়ে যেত।

একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসোইন বলেন, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে গবেষণায় বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাচ্ছে কেন, আমাদের গবেষণার আগ্রহ কমছে কেন। তবে আলাদা আলাদা খাতে হিসাব মিলাতেও সমস্যা হচ্ছে, বিল ভাউচারের স্বচ্ছতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এখানে আলাদাভাবে লোক রাখা উচিত যারা অফিসিয়াল কাজগুলো করবে আর গবেষকরা গবেষণায় সময় দেবে।

শিক্ষকদের দাবি গবেষণার বিল উত্তোলনের কাজগুলো সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা সেল বা অফিস থাকা দরকার। গবেষণা সেল চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।

গবেষকরা প্রস্তাব করছেন, গবেষণা প্রকল্পের কাজগুলো একজন অধ্যাপকের অধীনে সকল কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। গবেষকরা অনুমোদন পেলে সহজেই এ সেলের মাধ্যমে গবেষকের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে। ফলে শিক্ষকরা গবেষণায় সময় দিতে পারবেন। এতে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে বলে জানান তারা।

গবেষণা সেল তৈরি ও প্রকল্পের বিল উত্তোলনের সমস্যা উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা পরামর্শ করবো। যতটুকু সম্ভব সহজীকরণের চেষ্টা করবো।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের কাজ দুটি, শিক্ষাদান এবং গবেষণা। গবেষণার বিকল্প নেই। কিন্তু প্রতিনিয়তই শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ কমছে এটা আশঙ্কাজনক। গবেষণার পাশাপাশি দক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য থাকতে হবে। কখনো হাল ছাড়া যাবে না।

এফএ/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,