রাজশাহীতে জমে উঠেছে আমের বাজার। জেলার সবচেয়ে বড় বাজার বানেশ্বর হাটে গোপালভোগ কেনাবেচা জমেছে। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার মৌসুমের শুরু থেকেই দাম বেশি। পাইকারিতে ৬০-৬৫ টাকা বিক্রি হলেও খুচরায় ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে হাটে পাইকারির চেয়ে খুচরা ক্রেতা কম।
মঙ্গলবার বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি মণ ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বিক্রি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গুটি আম। এই জাতের আম প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ। যা গত বছরের তুলনায় বেশি বলেছেন ক্রেতারা।
হাটে গিয়ে দেখা গেছে, চাষি ও ব্যবসায়ীরা ভ্যান এবং নসিমন-করিমনে করে আম নিয়ে হাটে আসছেন। এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৬০টি ক্যারেট থাকছে। ভ্যান ও ট্রলির ওপর আম সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অপেক্ষাকৃত পাকা আমগুলো ওপরে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের আম কেটে দেখাচ্ছেন। অনেকে খেয়ে পছন্দ হলে কিনছেন।
আমচাষি হাকিম উদ্দিন বলেন, আম পাকতে শুরু করেছে। রাতে পাকাগুলো গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। চারঘাট উপজেলায় আমার বাগানে ৩৫টি গাছ আছে। সেসব গাছের ৭৩ ক্যারেট গোপালভোগ বাজারে এনেছি। গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি পাচ্ছি। এমন দাম থাকলে ভালো আয় হবে।
বানেশ্বর হাটের আম বিক্রেতা রইসুল ইসলাম বলেন, গত রোববার গোপালভোগ বেশি বিক্রি হয়েছে। এর আগে গুটি জাতেরগুলো বিক্রি হয়েছিল। তবে গুটি জাতের চাহিদা এখন কম। গোপালভোগ পাইকারিতে মণ ২ হাজার ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আড়তের আরেক বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, হাটে খুচরা ক্রেতা কম। বেশিরভাগ আড়তদাররা কিনে নিচ্ছেন। তারা একসঙ্গে চাষি ও ব্যবসায়ীদের থেকে বেশি করে কিনে ট্রাকভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। প্রতিদিন কেনাবেচা হচ্ছে। এর মধ্যে শনিবার ও মঙ্গলবার বেশি বিক্রি হয়। কারণ, এই দুদিন হাটবার। পাইকারিতে কেজি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পবা উপজেলার মড়মড়িয়া থেকে আম নিয়ে আসা মিজানুর রহমান বলেন, অনলাইনে যারা আমের ব্যবসা করেন, তাদের সংখ্যাই বেশি। পাশাপাশি অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী এসেছেন। তবে খুচরা ক্রেতা কম। শনিবার থেকে আম বাজারে উঠছে। ইতোমধ্যে বাজার জমে উঠেছে। ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে।
চারঘাট উপজেলা থেকে আম নিয়ে আসা কামাল হোসেন বলেন, সকালের দিকে আম নিয়ে আসতে পারলে একটু ভালো দামে বিক্রি করা যায়। আর বেলা যত বাড়ে তত আমের দাম কমতে থাকে। এক কারণ হচ্ছে পাইকারা সকালে আম কিনে ট্রাকভর্তি করে দ্রুতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেয়।
বাজার জমে উঠছে জানিয়ে বানেশ্বর হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, জেলার সবচেয়ে ভালো আমগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপালাভোগ, লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া। শনিবার থেকে হাটে গোপালভোগ আম আশা শুরু হয়েছে। এখনও লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া আসতে বাকি। এবার তুলনামূলক ফলন কম হলেও দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। গত বছর মৌসুমের শুরুতে গোপালাভোগের মণ ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ বছর একই সময়ে মণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। ফলে আশা করা যায়, লোকসান হবে না চাষিদের।
ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। ২৫ মে গোপালভোগ আম বাজারে এসেছে। একই দিন রানিপসন্দ আসার কথা থাকলেও পরিপক্ব হয়নি। এরপর লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে পাড়া যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি; ৫ জুলাই বারি-৪ আম; ১০ জুলাই আশ্বিনা; ১৫ জুলাই গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম পাড়া যাবে। তবে এই তারিখের আগেও চাষিরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে আম পরিপক্ব হওয়া শর্তে পাড়তে পারবেন। এর বাইরে বারোমাসি কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। এ বছর আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘এবার এই অঞ্চলে বড় ধরনের কোনও ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়নি। তাই কম মুকুল আসলেও যেসব আম গাছে ধরেছিল সেগুলো টিকে গেছে। দাম ভালো পাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে আশা করছি।’
আরএইচএফ/এসআর