ঘূর্ণিঝড় রেমালে
র তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। এদের মধ্যে পটুয়াখালীতে মো. শহীদ (২৭), ভোলায় জাহাঙ্গীর (৫০), মাইশা (৪), মনেজা খাতুন (৫৪) ও বরিশালে জালাল সিকদার (৫৫), মো. মোকলেছ (২৮), মো. লোকমান হোসেন (৫৮), এবং সাতক্ষীরায় শওকত মোড়ল (৬৫), চট্টগ্রামে ছাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬), ও খুলনায় লাল চাদ মোড়ল (৩৬) মারা গেছেন।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (২৭ মে) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি এ কথা জানান।
এসব জেলা হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রাম। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি জানান, ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত।
ক্ষতিগ্রস্ত ১৯টি জেলাগুলো হচ্ছে- খুলনা, সাতক্ষিরা , বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালি, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং যশোর।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়নের ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪। ঘূর্ণীঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা ৩৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিদ্ধস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪শত ৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিকভাবে বিদ্ধস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯শত ৯২টি ঘরবাড়ি।
ঘূর্ণীঝড় সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাসমূহে ৯ হাজার ৪শত ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮ লাখেরো বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১শত ছেচল্লিশটি।
দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ১ হাজার ৪শত ৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে যার মধ্যে চালু আছে ১ হাজার ৪শত টিম।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে আমরা ইতিমোধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে পনেরোটি জেলায় জি আর (ক্যাশ) তিন কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, ৫ হাজার ৫শত মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ, গো খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্রভাগ ঢাকা অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাবে রাজধানীতে ব্যাপক বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
সকালে আবহাওয়া দপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, উপকূলে ঝড়, বৃষ্টি, জোয়ার আর জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্রভাগ দুপুরের পর ঢাকায় ঢুকবে। রেমালের কেন্দ্রভাগ বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ঢাকার দিকে এসে অতিক্রম শুরু করবে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার, বৃষ্টি আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ঢাকার ওপর দিয়ে এটা পর্যায়ক্রমে সিলেট দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে যাবে ৷
এদিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দমকা হাওয়াসহ ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে দেশের উপকূল অঞ্চলে।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টার পরপরই মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।