ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভোলার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার ঢালচর, চর মোতাহার, চর মাইনকা, কলমি ও চর কুকরি মুকরিসহ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০টি বিছিন্ন দ্বীপ চরের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানিতে রাস্তাঘাট দোকানপাটসহ মানুষের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। এতে করে অনেক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশসহ ইউপি সদস্যরা বাড়ি বাড়ি মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারলেও বেশি সংখ্যক মানুষ রয়েছেন পানিবন্দি ।
চলমান ঘূর্ণিঝড় রেমালে বেলা সাড়ে ১২টার পর থেকে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চরফ্যাশনে সকাল থেকেই আকাশ মেঘে কালো হয়ে আছে। প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া বইছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছন উপকূলের নদী তীরের বাসিন্দারা।
এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে পুরো চরফ্যাশন। বিদ্যুৎ না থাকায় বিঘ্ন হচ্ছে টেলিযোগাযোগ সেবাও। অধিকাংশ এলাকায় বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। এছাড়া দেখা দিয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক জটিলতা।
চরফ্যাশন জোনাল অফিসার মো. মিজানুর রহমান জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে জেলার অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছে। চরফ্যাশনেও ঝড়ের গতি বেশি। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ছে। এসব কারণে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাতাসের গতি কমে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার বেতুয়া লঞ্চ ঘাট, হাজারীগঞ্জ ও জাহানপুর ইউনিয়নসহ বেশকিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘাটে নোঙ্গর করা প্রায় শতাধিক ছোট-বড় নৌকা ও মানুষের ঘর-বাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর তলিয়ে গেছে।
উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরপাতিলা এলাকার বাসিন্দা নোমান বলেন, আমাদের এখানে বেড়িবাঁধ নেই। এ কারণে ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। তাই আমরা আতঙ্কে রয়েছি।
বিষয়ে চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাসানুজ্জামান বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় রোববার জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরীন হক বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। উপজেলায় ১৫৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রায় ৩০০ এর অধিক স্বেচ্ছাসেবী মোতায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও সিভিল ডিফেন্সকে প্রস্তুত রাখাসহ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। উপকূলীয় মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার মজুদ রাখা হয়েছে।
এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে টিম গঠন করে এলাকার জনগণকে সচেতন ও সর্তক থাকতে কন্ট্রোল রুমের মধ্য দিয়ে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করাসহ উপকূলের বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে।
এসএফ/এমবি/এমএ