রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাটখ্যাত বানেশ্বর হাটে গোপালভোগ আম আসতে শুরু করেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম একটু বেশি। ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী শনিবার (২৫ মে) থেকে গোপালভোগ ও রানিপসন্দ আম নামানো শুরু হয়।
সরেজমিন বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের কাছ থেকে ব্যাপারীরা গোপালভোগ আম কিনছেন ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।
জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের আমের হাটটি ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক ঘেঁষে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে সাপ্তাহিক হাট বসে। তবে আমের মৌসুমে প্রতিদিনই আমের হাট বসে এখানে। এবছর ১৫ মে এ হাটের আমের মৌসুম শুরু হয়েছে। আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন বানেশ্বর হাটে আম বেচাকেনা হবে। হাট এলাকায় প্রায় সব কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয় আছে। এর ফলে এখানে আম কিনে সহজেই পাঠানো যায় দেশের যেকোনো প্রান্তে।
গতকাল বোরবার দুপুরের পর গিয়ে দেখা যায়, ভ্যান ও ট্রলির ওপর আম সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে বাজারে মাচা পেতে আম নিয়ে বসেছেন। আবার যেসব জায়গায় আম স্তূপ করে রাখা হয়েছে সেখানে অপেক্ষাকৃত পাকা ও রংধরা আমগুলো ওপরে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের আম কেটেও দেখাচ্ছেন। অনেকে আম খেয়ে পছন্দ হলে কিনছেন।
বাজারে গোপালভোগ আম নিয়ে এসেছিলেন চারঘাট উপজেলার শলুয়া এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। তিনি রোববার ৩০ মণ গোপালভোগ আম পেড়েছেন। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ভেতরের শতবর্ষী একটি গাছ থেকেই আম পেড়েছেন ৩০ মণ। তবে তাঁর আমের আকৃতি একটু ছোট। তিনি বলেন, এবার আবহাওয়ার কারণে আমের আকৃতি ছোট, আমও কম। তবে আজ একটি গাছ থেকেই ৩০ মণ আম পাড়া হয়েছে। প্রতি মণ ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে দুপুর ১২টার দিকে আমের দাম মণপ্রতি আরও ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি ছিল বলে তিনি জানান।
তবে গত বছর ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোপালভোগ আম বাজারে আসার প্রথম দিন প্রতি মণের দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এবার আমের দাম নিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, এবার আমরা গুটি আমই ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। গোপালভোগ আম সাধারণত দেড় হাজার টাকা মণে বিক্রি হয়। এবার আমের দাম বেশিই যাবে। কারণ এবার গাছে আম কম ধরেছে।
পবা উপজেলার মড়মড়িয়া থেকে আম এনেছিলেন মিজান নামের এক ব্যবসায়ী। তিনিও বাগান ধরে আম কিনেছেন। তিনি বলেন, অনলাইনে যাঁরা আমের ব্যবসা করেন, তাঁরাই তাঁদের ক্রেতা। এছাড়া অন্যান্য পাইকাররাও আসেন আম কিনতে। প্রথম দিকে বাজারে আম কম থাকলেও কয়েকদিন বাজারে আম রাখার জায়গা থাকবে না। সেই সঙ্গে ক্রেতাও থাকবে অনেক।
চারঘাটের কামাল হোসেন দুই মণ আম এনেছিলেন। তিনি ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ দাম চাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সকালের দিকে আম নিয়ে আসতে পারলে ভালো হতো। তখন ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ ছিল। তবে বাগান থেকে কিছু আম বিক্রি করায় সময়মতো বাজারে আসতে পারেননি।
অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশে আম বিক্রি করেন দুই বন্ধু ফজলে রাব্বি ও মো. জুয়েল রানা। বানেশ্বর হাট থেকে তাঁরা আম কিনেছেন ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। ফজলে রাব্বি বলেন, তিনি প্রথমদিকে বাজারে আসবে। এরপর আর হয়তো আসবেন না। শুধু অর্ডার নেবেন, আর জুয়েল আম পাঠিয়ে দেবেন। তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর আম অনলাইনের মাধ্যমে এখন একেবারে মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায়। আমের বাজার আগের চেয়ে অনেক বিস্তৃত হয়েছে। এটা আমচাষি ও ক্রেতা—উভয়ের জন্যই ভালো।
এদিকে, একইদিন রানিপসন্দ আম আসার কথা থাকলেও আমটি পরিপক্ব হয়নি। আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বাগানমালিকরা।
রাজশাহীর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এরপর লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি; ৫ জুলাই বারি-৪ আম; ১০ জুলাই আশ্বিনা; ১৫ জুলাই গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে।
তবে এই তারিখের আগেও চাষিরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে আম পরিপক্ব হওয়া শর্তে গাছ থেকে নামাতে পারবেন। এর বাইরে বারোমাসি কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে ছালমা বলেন, এবার মুকুল কম আসায় আম কিছুটা কম এসেছে। যদিও এবার বড় কোনো ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হয়নি, এটা একটা ভালো দিক। তাছাড়া, আম কম ধরলেও এবার দাম ভালো থাকায় চাষিদের কোনো ক্ষতি হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
আরএফ/এমবি