চরফ্যাশনে গৃহকর্মীকে ১৬ মাস বন্দি রেখে শিক্ষক পরিবারকে হয়রানি
Published : Monday, 6 May, 2024 at 7:45 PM Count : 203
ভোলার চরফ্যাশনে মোসামদ এলমা (১৪) বছর বয়সের এক গৃহকর্মীকে প্রায় ১৬ মাস যাবত বসতঘরে বন্দি রেখে শিক্ষক পরিবারকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহকর্মীকে বন্দী রাখা অভিযুক্তর নাম মোসা ঝুমুর বেগম (৩২)। সে ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান ভুট্টুর স্ত্রী।
বন্দী রাখা এলমা বাড়িতে ফিরে আসার পর এ ঘটনায় সোমবার (৬ মে) সকালে সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক পরিবার।
বন্দী হওয়া এলমা ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের মৃত ইব্রাহিমের কন্যা সন্তান। এবং চরফ্যাশন উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও চরআইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম শাহর গৃহকর্মী।
অভিযোগে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম শাহ জানান, এলমার বয়স যখন ৪-৫ তখন তার বাবা মারা যান। এরপর তার মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়। পরে তাকে তার মায়ের কাছ থেকে মেয়ে হিসেবে আমার বাসায় লালন-পালন করার দায়িত্ব নেই। দীর্ঘ ৭-৮ বছর এলমার জীবন ভালোই চলছিল। গত ১০-১০-২২ সালে আমার স্ত্রী কামরুন নাহার সাংসারিক কাজে এলমাকে বকা দিলে সে অভিমান করে তার নানার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড় হয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। এরপর তার নানা বাড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিলে তাকে না পেয়ে গত ১৪-১০-২২ দক্ষিণ আইচা থানায় সাধারণ ডায়েরি করি।
অভিযোগে তিনি আরো জানান, এলমাকে আমার পার্শ্ববর্তি বাসিন্দা আলতাফ হাওলাদারের মেয়ে ঝুমুর ভুলভাল বুঝিয়ে আমার বাসা থেকে তার ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নে স্বামীর বাসায় নিয়ে তাকে দীর্ঘ ১৬ মাস বন্দী রেখে আমাকে ও আমার পুরো পরিবারকে সামাজিক ও অর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এলমা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমার পরিবার উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ছিল। কিন্তু আলতাফ হাওলাদার ও তার মেয়ে ঝুমুর আমার পাশ্ববর্তী হওয়া সত্ত্বেও তারা আমাকে ও আমার পরিবারকে কখনও বলেনি যে এলমা তাদের বাসায় কর্মে আছে। তারা আমাকে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমেও হয়রানি করেছে। এতে আমার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি এই ক্ষতিপূরণ সহ ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ ঘটনাটি পুনরাবৃত্তিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
গৃহকর্মী এলমা জানান, আমার বাবা মারা যাওয়ার পর উপজেলার চরমানিকা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা চরআইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম শাহর স্ত্রী আমার আন্টি কামরুন নাহার তার বাসায় গৃহকর্মীর কাজ দেন। প্রায় ৭-৮ বছর পর্যন্ত ভালোভাবেই কাজ করছিলাম। সাংসারিক কাজে আন্টি আমাকে বকা দিলে গত১০-১০-২২সালে আমি আমার নানা বাড়িতে চলে যাই। এরপর সেখান থেকে চরমানিকা ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলতাফ হাওলাদারের মেয়ে ঝুমুর আমাকে ভুলবাল বুঝিয়ে তার ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের বাসায় নিয়ে বন্দী রাখে। বিনা পারিসশ্রমিকে সাংসারিক কাজ করান। এদিকে আমি আন্টি ও নানা বাড়িতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাও তারা দেয়নি। দীর্ঘ ১৬ মাস যাবত সেই বাসায় বন্দী ছিলাম। পরে শুক্রবার ৩ মে ২৪ সালে সেখান থেকে পালিয়ে নানা বাড়িতে আশ্রয় নিলে আমার কাকা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল কাসেম শাহ ও তার স্ত্রী আমাকে পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার করে তাদের বাসায় নিয়ে আসেন।
অভিযুক্ত ঝুমুর বেগমের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তাবে তার ছোট ভাই মো জুবায়ের হোসেন উজ্জ্বল ঘটনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, শিক্ষক পরিবারের সাথে দুই-একদিনের মধ্যে মিমাংসায় বসবো।
দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সাঈদ আহমেদ বলেন, বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে আইন আনুক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসএফ/এসআর