দিনাজপুরে ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রীতে ওঠা নামা করছে। প্রচন্ড দাপদাহে মানুষের হাঁসাফাঁস অবস্থা। এই তীব্র তাপদাহে দিনাজপুর শহরে বেড়েছে হাতপাখা বিক্রি। আর প্রতিবারের ন্যায় এবারো দিনাজপুর শহরে হাতপাখা বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন মোঃ সোহাগ(৩৫) মোঃ বসির আলী (৫১) ও সাইফুর রহমান (৪৬)।
এই গরমে মানুষের চেহারা মলিন হয়ে গেলেও পাখা ভাল বিক্রি হওয়ায় মোঃ সোহাগ, মোঃ বসির আলী ও সাইফুর রহমান বেশ খুশি।
তবে পাখার চড়া দামে বেজার ক্রেতারা। দিনাজপুরে সর্বচ্চো ১০০ টাকা ও সর্বনি¤œ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হাতপাখা। যা গতবার বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়।
তারা জানান, বেড়েছে তাপদাহ, বেড়েছে হাতপাখা বিক্রি। প্রচন্ড গরমে পাখার কদর এখন সবখানে। প্রচন্ড গরমে লোডশেডিং এর সময় মানুষকে একটু প্রশান্তি ও ঠান্ডার পরশ পেতে হাত পাখার কোন বিকল্প নেই। তাল পাখা ও কাপড়ের তৈরি পাখা হাতে করে রাস্তায় রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে বিক্রি করছেন পাখা বিক্রেতারা।
প্রচন্ড গরমে প্রশান্তি দিতে দিনাজপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বাহারি রকমের হাত পাখা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, তাল পাতার পাখা, সুতায় বুনানো পাখা, বিভিন্ন কাপড়ের তৈরি হাত পাখা। তাছাড়াও প্লাস্টিকের তৈরি পাখাও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। একদিকে লোডশেডিং, অন্যদিকে তীব্র তাপদাহে মানুষ ও প্রাণীকুল অতিষ্ট। তাই জেলার বিভিন্ন এলাকায় কদর বেড়েছে হাত পাখার।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা বাহাদুর বাজারে দেখা মিলে হাত পাখা ব্যবসায়ী মোঃ সোহাগের। তার বাড়ী নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলা শহরে। প্রায় ১০/১২ বছর ধরে সৈয়দপুর থেকে দিনাজপুরে এসে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হাতপাখা হেঁটে হেঁটে বিক্রি করেন।
আলাপকালে তিনি জানান, ১৫ দিন হলো দিনাজপুর শহরে এসেছেন। এই সময়টায় তিনি তাল পাতার পাখা, সুতায় বুনানো পাখা ও বাঁশবেতের রঙিন হাত পাখা বিক্রি করছেন। অন্য সময় নানান ছোটখাটো ব্যবসা বা দিনমজুরি করে সংসার চালান। প্রতিদিন তিনি ১৫০ তেকে ২০০টি পাখা বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, এই পাখা গুলো বগুড়ায় তৈরি হয়ে থাকে। সেখান থেকে সৈয়দপুর উপজেলায় আসে। তিনি সৈয়দপুর থেকে পাইকারি কিনে দিনাজপুরে এসে খুচরা বিক্রি করেন। প্রকার ভেদে ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত তার কাছে পাকা রয়েছে। চাহিদাও ভাল। পাখা বিক্রি করে দিনে দেড় হাজার থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন তিনি।
এর আগে গতক্রবার দুপুর ২ টায় দেখা মিলে আরেক পাখা ব্যবসায়ী বশির আলীর সঙ্গে। তিনিও এসেছেন সৈয়দপুর থেকে। তিনি জানান, এবার গরম একটু আগে ভাগেই শুরু হয়েছে। তাই পাখা বিক্রি ভাল। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,গরম যত বেশী হবে আমার পাখাও ততবেশী বিক্রি হবে। কষ্ট তো হবেই তবে পাখা বিক্রি করে দুটো টাকার মুখ দেখতে পাচ্ছি এজন্য বেশ খুশি।
তার কাছ থেকে পাকা কিনেন ফল ব্যবসায়ী লিটন হোসেন। তিনি বলেন, পাখার কদর বেড়েছে। তাপদাহ চলায় এবং বিদ্যুতের লোডশেডিং চলায় মানুষ পাখা কিনছেন। তিনি বলেন গতবারও দুটি পাখা কিনেছিলাম,এবারও দুটি পাখা কিনলাম। আগে গ্রামাঞ্চলে এই পাখার কদর বেশি থাকলেও এখন বাধ্য হয়ে শহরের মানুষও পাখা কিনছেন। দুটি রঙিন বাঁশবেতের পাখা কিনলাম ১৬০ টাকায়। এটা দেখতেও সুন্দর আবার বিদ্যুৎ না থাকলে বাতাসও করা যাবে। এই গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট তো লেগেই আছে। তাই এই পাখার কোনো বিকল্প নেই। এই পাখার বাতাস অনেক প্রশান্তি দেয়।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দিনাজপুরে ৪১ ডিগ্রী তামাত্রা চিল। আজ বুধবার বিকাল ৩ টায় ৩৮.৫ ডিগ্রী তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কবে নাগাদ বৃষ্টি হবে এমন তথ্যও দিতে পারেননি তিনি। তবে এই তাপদাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এএইচএম/এসআর