রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কাছারি কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া নাছিমা কলেজে পড়া অবস্থায় ছাত্রলীগের সর্মথনে বিভিন্ন কর্মকান্ড শুরু করেন। পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণকারী সেই নাছিমা বর্তমানে রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি করছেন কলেজের শিক্ষকতাও হয়েছেন উপজেলা নির্বচনে একমাত্র মহিলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।
অদ্যম্য এই নাছিমার পেছনের গল্পটাও বেশ কঠিন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বামী বাবুল হোসেন রাজশাহী—৪ (বাগমারা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ওই আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন অধক্ষ আবুল কালাম আজাদ। বাবুল হোসেনের স্ত্রী নাছিমা আক্তার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে স্বামীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি প্রচারণায় অংশ নেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামী বাবুল তাঁকে তালাক দেন। তাতেও তিনি থেমে থাকেননি বরং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে শেষ পর্যন্ত প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিজয়ী করতে সহায়তা করেছেন। সেই নাছিমা আক্তার এবার বাগমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নাছিমা আক্তারের সাবেক স্বামী বাবুল হোসেন বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ত্রী তাঁর পক্ষে কাজ না করে দলীয় প্রার্থীর প্রচারণায় নিয়মিত সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। এই কারণে তাঁকে নির্বাচনের আগে ৩ জানুয়ারি তালাক দিয়েছেন। তালাকের নোটিশের কপিও নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেছেন তিনি।
আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে বাগমারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান পদে নাছিমা আক্তারসহ মোট তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বাবু। এঁদের মধ্যে জাকিরুল ইসলাম ও নাছিমা আক্তার বর্তমান সংসদ সদস্য অধক্ষ আবুল কালাম আজাদ এমপির অনুসারী। অন্যদিকে আবদুর রাজ্জাক সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হকের অনুসারী। গত ২৩ এপ্রিল মনোনয়ন যাচাই—বাছাই শেষে তাঁদের তিনজনেরই মনোনয়ন পত্র বৈধ হয়েছে। তাতে এখন পর্যন্ত বাগমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনজনই প্রতিদন্দীতা করবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। যদিও ৩০ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন।
পূর্বে নাছিমা আক্তারের একাধিকবার জনপ্রতিনিধি হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০৩ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কাছারি কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরে ওই ইউপির চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর পরিষদের সদস্যদের ভোটে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। পরে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুনরায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছিলেন।
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বামী বাবুল হোসেন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে তিনি ঐবার নির্বচনে অংশ না নিয়ে স্বামীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। সেই স্বামী তাকে তালাক দেওয়ায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন বলে 'দ্যা ডেইলি অবজারভার' প্রতিবেদককে জানান।
এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে নাছিমা নিজেকে আওয়ামী লীগের দলীয় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারনা চালান। প্রায় দেড় বছর ধরে উপজেলাজুড়ে নিজেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ করে ফেস্টুন ও পোস্টার সাঁটান। পুরোদমে গণসংযোগও শুরু করেন। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেন তিনি। এখনো প্রতীক বরাদ্দ না হলেও মনোনয়ন বৈধ হওয়ায় ভোটারদের দারে দারে ছুটছেন তিনি। নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি আগামী দিনের উন্নয়ন নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন তিনি।
জীবনের নানান প্রতিকুলতা সত্ত্বেও নাছিমা আক্তার ভেঙে পড়েননি। অতীত নিয়ে কিছু বলতে চান না, সামনে এগিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, এলাকার লোকজনের জন্য কিছু করার জন্যই প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম সেখানে কাজের পরিধি কম, জনসেবা করারও সুযোগ কম থাকে। তাই এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি। আশা করছি এলাকার নারী সমাজের পাশাপাশি সব শ্রেণির ভোটারদের সমর্থন পাবো। এলাকার লোকজনের পাশে আজীবন থাকতে চান বলে জানান নাসিমা।
আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া সবার নাগরিক অধিকার। তিনি নাছিমাকে ছোট বোন হিসেবে দেখেন। তাঁর প্রতি কোনো বিরূপ মনোভাব ব্যক্ত করেননি তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কজন নেতা বলেন, নাছিমা আক্তার দলের ভক্ত। সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তিনি সরব। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কাজ করার কারণে তার সংসার ভেঙেছে। ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় তিনি সেটা প্রকাশ করে দুঃখ করেন।
রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন বলেন, নাছিমা আক্তারের বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাটা দুঃখজনক। তিনি একজন ভালো সংগঠক। তবে দলীয় প্রতীক না থাকার কারণে কোনো প্রার্থীকে দল থেকে তাঁরা সমর্থন করছেন না। নাছিমাসহ সবার জন্যই শুভকামনা থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমএ/এমবি