গোয়ালন্দে বেপরোয়া মাটি ব্যাবসায়ীরা
Published : Sunday, 7 April, 2024 at 7:39 PM Count : 87
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বেপরোয়া মাটি ব্যাবসায়ীরা। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হলেও পর মুহূর্তেই আবার মাটি কাটা শুরু করছে মাটি খেকোর দল। তবে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে সামান্য জরিমানা তাদের আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রবিবার (৭ এপ্রিল) সরজমিনে দেখা যায় উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ফৈজদ্দিন পাড়ায় মনোয়ার হোসেন মনার ড্রেজার চলমান। অথচ সপ্তাহ পার হয়নি উপজেলা প্রশাসন এই ড্রেজার ভেঙে দিয়ে আসছে এবং জরিমানা করা হয়েছে। তবে জরিমানা করা হয়েছে মাত্র দুই হাজার টাকা। এরফলে ক্ষতি পুষাতে আবার বেপরোয়া এই ড্রেজার ব্যাবসায়ী।
উপজেলার দেবগ্রামের অন্তার মোড় থেকে ফরিদপুর জেলা সংলগ্ন উজানচর ইউনিয়নের কামারডাঙ্গী পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বন্ধ কোল রয়েছে, যা মরা পদ্মা নামে পরিচিত। এক সময় প্রবহমান থাকলেও বর্তমানে এর বুকে বয়ে চলা জলধারার দুই পাশ জুড়ে জেগে ওঠা চরে রয়েছে হাজার হাজার একর ফসিল জমি ও বসতবাড়ি। দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া, উজানচর ইউনিয়ন জুড়ে থাকা মরা পদ্মার বুকে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ৮ থেকে ১০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাটা মালিকদের দাদনের টাকায় ফসলি জমিতে পুকুর খননের নামে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ছোট্ট ভাকলা ইউনিয়নের চর বালিয়াকান্দি এলাকার আবুল মল্লিকের পুকুর থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে আজিবর সরদারের ইট ভাটায়। পাকা রাস্তার পাশে প্রায় পঞ্চাশ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতো গভীর করলে আগামী বর্ষা মৌসুমে পাকা সড়কটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে আজিবর সরদারের ছেলে ফিরোজ সরদারের কাছে জানতে চাওয়া হয় পাকা রাস্তার পাশে এতো গভীর গর্ত করলে পাকা রাস্তা টিকবে কিভাবে। তিনি জানান, তারা আসলে ট্রাকপতি টাকা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া তারা ওখানকার ভেকু মেশিন বা কোন কিছুর খবর রাখেন না।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা-৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্য সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন ও ফসলি জমিতে ভেকু্যু দিয়ে মাটি উত্তোলন থামছে না। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল- জরিমানায়ও থেমে নেই ওই মাটি খেকোদের অবৈধ মাটি ব্যবসা। গ্রামীণ সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলা মাটিবাহী ট্রাকচাপায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। দীর্ঘদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত না হওয়ায় মাটি খেকোরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, আমি শুনেছি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ মাটি ব্যবসা চলছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুটি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। ভেকু্যু ও ড্রাম ট্রাকের চালককে জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপজেলার সব অবৈধ মাটি ব্যবসা বন্ধ করা হবে।
এসআই/এসআর