রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার চরে রসুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব রসুন জমি থেকেই প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। এবার লোকসানের শঙ্কা কাটিয়ে রসুনের ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা।
কৃষকরা বলছেন, হাটে বিক্রির ঝামেলা এড়াতে ক্ষেত থেকেই তারা রসুন বিক্রি করছেন। এতে পরিবহণ খরচ ও হাটের হাসিলসহ (খাজনা) বিভিন্ন খরক বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি নানা ঝক্কিঝামেলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন তারা।
গতকাল শনিবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের কালিদাশখালি, পলাশিফতেপুর ও গড়গড়িসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেত থেকে রসুন তুলছেন কৃষকরা। সেসব রসুন কিনে বস্তায় ভরে ক্ষেতেই স্তুপ করে রাখছেন ব্যবসায়ীরা।
চরকালিদাশখালি গ্রামের ক্ষেত থেকে কেনা রসুন বস্তায় ভরে ক্ষেতে স্তুপ করে রাখছিলেন দাদপুর গ্রামের জাহের ব্যাপারি। তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রসুন কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। প্রথমে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সেসব এলাকার রসুনের দর জেনে নেন। এরপর চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই দামের চেয়ে কিছুটা কমে ক্ষেত থেকেই রসুন কেনেন। পরে তা চাহিদামতো পাঠিয়ে দেন। এতে রসুন পরিবহণের খরচ ও লাভের টাকা উঠে যায়।
কৃষক আলাউদ্দীন বলেন, মৌসুমের শুরুতে রসুনের দাম পড়ে যায়। এতে লোকসানের শঙ্কার মধ্যে পড়েন রসুন চাষিরা। কিন্তু এখন সেই শঙ্কা কেটে গেছে। বাজারে রসুনের দামও ভালো। তাই ক্ষেত থেকেই রসুন বিক্রি করছেন। এতে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচটাও সাশ্রয় হচ্ছে।
তমাল নামের অপর কৃষক বলেন, লোকসানে পড়লে সেই ফসল আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় চাষিরা। এবার আমরা রসুনের লোকসানের ভয়ে ছিলাম। এখন সেই ভয় কেটে যাচ্ছে।
এসব কৃষকরা বলেন, দুই বছর ধরে এভাবেই ক্ষেত থেকে রসুন বিক্রি করছেন। এবার ক্ষেতেই রসুন ভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে প্রতি মণ রসুন বাজারে নিতে পরিবহণ খরচ হতো কমপক্ষে ১৫-২০ টাকা। হাটবাজারের ইজারাদারদের দিতে হতো মণপ্রতি ১০ টাকা। ক্ষেতেই রসুন বিক্রি করায় পরিবহণ খরচ ও বাজারের খাজনা বেঁচে যাচ্ছে।
এবার এক বিঘা রসুন আবাদে সেচ, সার, বীজ ও শ্রমিকসহ খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকার বেশি। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হচ্ছে ৪০ মণ। পাইকারি ৪ হাজার টাকা মণ হিসেবে ১ বিঘার রসুন বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খরচবাদে প্রতি বিঘায় লাভ হচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
গড়গড়ি গ্রামের মুকুল জানান, ৯ কাঠা জমি থেকে ১৮ মণ রসুন উত্তোলন করেছেন তিনি। পরে তা বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার টাকায়।
পলাশিফতেপুর চরের রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি নিজেও পদ্মার চরে তিন বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছি। গেঢ়, সার, বীজসহ প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা জমি থেকে বিক্রি করব আশা করছি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান জমিতে লেবার দিয়ে রসুন উঠিয়ে ওজন করে নেন। রসুন ভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। প্রতি মণ ৩৬০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। তিনি বলেন, যাতায়াত খরচসহ আমি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বাঘা ও আড়ানী হাটে বিক্রি করব।
বাঘা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মোতলেব হোসেন জানান, প্রতিকেজি রসুন বিক্রি করছেন ১৪০ টাকা কেজি দরে। পাইকারদের কাছ থেকে তারা১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে কেনেছেন।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৯৩৪ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মার চরে অর্ধেক রসুনের আবাদ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ০৪ মেট্রিক টন। এ রসুন স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাজার উঠা-নামার কারণে অনেক সময় কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। ক্ষেত থেকেই ফসল বিক্রি হওয়ায় কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন। কৃষকদের প্রোণাদনাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এতে তারা কৃষিকাজে তারা আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
আরএইচ/এমবি