লবন পানিতে ১৩ একর জমির তরমুজ নষ্ট
Published : Thursday, 21 March, 2024 at 3:03 PM Count : 135
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে এক কৃষকের সাড়ে ১৩ একর (২০ বিঘা) তরমুজ ফসলী ক্ষেতে লবন পানি প্রবেশ করে ৪৪ হাজার তরমুজের চারা গাছ মারা গেছে। কৃষকের কোটি টাকার স্বপ্ন এখন বিলীন, অপূরণীয় ক্ষতিতে দিশেহারা ওই কৃষক পরিবার।
অসাধু মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে স্লুইজ গেট থেকে লবন পানি প্রবেশ বন্ধের দাবি স্থানীয় কৃষকদের।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার তেলিগাতী ইউনিয়নের তেলিগাতী গ্রামের কৃষক আবুল বাশার হাওলাদার তার পতিত ২০ বিঘা জমিতে এ বছর প্রথম তরমুজ বীজ বপণ করেন। দেশী আমন ধান ঘরে তোলার পরে ৮ মাস ফসলী মাঠ পড়ে থাকে। সেই জমিতে তারই এক বন্ধুর পরামর্শে বাংলালিংক ও ম্যাংগোলা দুই প্রজাতির তরমুজ বীজ বপণ করে স্বল্প সময়ে তিন মাসে তরমুজ ফলিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারবে। বীজ বপণের ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফলন আসবে এমন উন্নত জাতের তরমুজ ওই এলাকায় তিনি প্রথম উৎপাদন করতে যাচ্ছিলেন। ৬৪ হাজার তরমুজের চারা তার গোটা ফসলী মাঠ জুড়ে, প্রতিটি গাছের ডগায় তরমুজ ফল কেবলমাত্র ধরেছে। অনেক গাছে তরমুজ ফল সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে।
হঠাৎ করে স্লুইজ গেট থেকে খালে লবন পানি প্রবেশ করায় সেই পানি থেকে তরমুজ ক্ষেতে সেচ দেবার কারণে কৃষকের গত ১ সপ্তাহ ধরে প্রতিনিয়ত গাছ মরে গিয়ে অর্ধেক বেঁচে আছে। অবশেষে ফসলী মাঠে রয়েছে মাত্র ২০ হাজার গাছ। স্থানীয় মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে রাতের আধারে স্লুইজ গেটের মূল ফটক খুলে পানি তোলার অভিযোগ করেন তিনি।
কৃষক আবুল বাশার হাওলাদার তরমুজের মাঠে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, বিভিন্ন এনজিও এবং মানুষের কাছ থেকে দাদনে টাকা এনে তরমুজ ক্ষেতে ফসল উৎপাদনের জন্য এ পর্যন্ত সার, ওষুধ ও শ্রমিকসহ প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। পাঁচ জন শ্রমিকের নিয়মিত মাঠে পরিচর্যার জন্য জনপ্রতি প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা করে বেতন দিয়ে আসছি। আর মাত্র দেড় মাস পরে এক লাখ ২৮ হাজার তরমুজ বাজারজাত করতে পারতাম। এতে ঘরে আসতো প্রায় কোটি টাকা। এ অপূরণীয় ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবো জানি না।
তিনি বলেন, তবুও হাল ছাড়িনি। নতুন করে বাঁচার জন্য পুনরায় ৬ বিঘা জমিতে আমেরিকান প্রজাতির সাম্মাম বীজ বপণ করে চারার বয়সও ২০ দিন হয়ে গেছে।
কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে বিনামূল্যে সেচ পাম্পের মেশিনের দাবি জানান তিনি। মিষ্টি পানির সেচ দিতে পারলে ফলন ভালো এলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদা আক্তার বলেন, হেরমা স্লুইজ গেটের চাবি তার পরিষদে থাকে, পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। গোপনে বা যখন-তখন পানি উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই, তবে মূল গেটের উপর থেকে অতিরিক্ত জোয়ারে অনেক সময় পানি প্রবেশ করে। বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আকাশ বৈরাগী বলেন, তেলিগাতী গ্রামের তরমুজ চাষি আবুল বাশার হাওলাদারের লবন পানির কারণে ক্ষতির বিষয়টি সরেজমিনে দেখা হয়েছে। ওই কৃষককে একটি সেচ পাম্প মেশিন বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে। স্লুইজ গেট থেকে যাতে করে লবন পানি প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে।
-একে/এমএ