For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

তিস্তার রুপালী বালুর চর ঢেকে গেছে সবুজে

Published : Wednesday, 13 March, 2024 at 3:18 PM Count : 145

নীলফামারীজলঢাকাতিস্তা নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠা রুপালী বালু চরগুলোতে সবুজের ঢেউয়ে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। তিস্তার রুপালী বালুর চর এখন ফসল চাষাবাদে সবুজে ঢেকে গেছে। 

বর্তমান মৌসুমে তিস্তার চরে চাষ হচ্ছে গম, ভুট্টা, বাদাম, পেঁয়াজ, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, তিল, কাউন, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার রবিশস্য। এসব রবিশস্য চাষে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন তিস্তা পাড়ের কৃষকরা। প্রায় প্রতিটি ফসলের ভালো ফলন হওয়ায় বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত কৃষকরা।  

উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলগুলো ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। 

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে তিস্তার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, তিস্তা নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের রবিশস্য চাষ করা হয়েছে। কোথাও এতটুকু জমি পতিত নেই। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সাথে নুড়ি পাথর, কাকনযুক্ত বালি ও মাটি বয়ে আসায় দ্রুত তিস্তার তলদেশ ভরাট হয়ে গিয়ে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। বালুর সাথে পলি মাটির স্তর পড়ে এসব চরকে আবাদী করে তুলছে। পলি মিশ্রিত এসব চরে গম, ভুট্টা, কাউন, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, বরবটি, মিষ্টি আলু, বাদাম, করলা, বেগুন, পুঁই শাক, লাউ শাকসহ বিভিন্ন রবিশস্য চাষের ধুম পড়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব চরে রবিশস্য চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। আর তাই যতদূর চোখ যায় এসব চরাঞ্চল শুধু সবুজ আর সবুজ। 
তিস্তা নদীর বিভিন্ন চর এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে তিস্তার চরে আমন ধান চাষ হয়নি। আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এলাকার কৃষকরা তিস্তার চরে বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য চাষ করেছেন। 

কৈমারী ইউনিয়নের তিস্তার চর এলাকার কৃষকরা জানান, ধান, গম চাষ করলে যে লাভ হয়, এর চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হয় রবিশস্যে। বিশেষ করে ভুট্টা চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা। প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ পর্যন্ত ভুট্টা হয়। যার মূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। আর ব্যয় হয় বিঘা প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা। ভুট্টা ঘরে তোলার সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব ভুট্টা চাষি বেশ লাভবান হবেন। 

তারা আরও জানান, আগে তিস্তার চরাঞ্চলগুলো পতিত ছিল। অন্য ফসলের আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় এসব জমিতে ফসল ফলানো হয়নি। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে এসব চরে নানামুখী রবিশস্য চাষ করা হচ্ছে। এতে ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যাচ্ছে।

উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলগুলোতে এ বছর রবিশস্যের ব্যাপক চাষ হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এই উপজেলার প্রতিটি চরাঞ্চলেও বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জলঢাকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়ন তিস্তা নদীর তীর ঘেষা। এই চারটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের জমিতে বিভিন্ন প্রকার রবি শস্যের চাষ করেছেন। রবি শস্যকে ঘিরে নদী গর্ভে নিঃস্ব হওয়া হাজার হাজার মানুষ এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন বিভিন্ন ফসল চাষাবাদে।

উপজেলা কৃষি অফিসার জানিয়েছেন, তিস্তার করাল গ্রাসে হাজার হাজার মানুষ আবাদী জমি, বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এই নিঃস্ব পরিবারগুলো বাঁচার তাগিদে তাদের বংশীয় ঐতিহ্য ত্যাগ করে রিকশা, ভ্যান চালানো ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন ভাবে শ্রম বিক্রি করে চলেছেন। তিস্তার নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠা ছোট-বড় চরগুলো তাদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এসব চরে এখন রবিশস্য চাষ করে জীবিকার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন কৃষকরা। এ ক্ষেত্রে এসব চাষিদের বিনামূল্যে সার-বীজ দিয়ে সহায়তাও করা হয়েছে। গত বন্যায় আমন ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় যে সমস্ত জমি পতিত ছিল সেগুলোতে আগাম জাতের রবিশস্য চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়ে আগাম জাতের বিভিন্ন চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তিস্তার বুক চিরে জেগে ওঠা চরগুলোতে পলি মিশ্রিত মাটি থাকায় এগুলোতে ভুট্টা, কাউন, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, মিষ্টি আলুর ফলন বেশ ভালো হওয়ায় কৃষকরা এসবের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কম খরচে অধিক ফলন পাওয়ায় এবং লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা আবাদের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন কৃষকরা। ভুট্টার পর এসব জমিতে তোষা পাট লাগানো হবে।

-এইচএস/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,