রাজশাহীতে পাখির খাবারের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) গম ও ধানের বীজ। অথচ, ভালোমানের বীজ উৎপাদন ও সংগ্রহ করে ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয় বিএডিসি)। ভালো ফসল উৎপাদন করতেই তাদের এই কার্যক্রম।
কিন্তু বিএডিসির বেশকিছু ধান ও গমের বীজ কৃষকদের কাছে না দিয়ে বিক্রি করা হয়েছে পাখির খাবারের দোকানে। রাজশাহীর এক পাখির খাবারের দোকানে মিলছে বিএডিসির বস্তায় ভরা বীজ গম ও ধান। প্রকাশ্যেই এসব ধান ও গম বিক্রি করা হচ্ছে।
বিএডিসি বলছে, ডিলারদের অবিক্রিত বীজ তারা যেখানে ইচ্ছা বিক্রি করতে পারেন, খেতেও পারেন। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্য, পাখি কিংবা মানুষ কেউই এটি খেতে পারে না। কেননা এটাতে কেমিক্যাল মিশ্রিত থাকে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, মহানগরীর গ্রেটার রোড মসজিদের বিপরীতে পাখির খাবারের দোকান ‘সেলিম এন্টারপ্রাইজ’। এখানে পাখির খাবার বিক্রি করা হয়। সেখানে সারি সারি সাজানো আছে বিএডিসির ধান ও গমের বীজ। এসব বস্তায় বিএডিসির সিলও মারা রয়েছে। বস্তা কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এসব বীজ। প্রতিকেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায় আর গম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
এসব বস্তায় বীজ প্রত্যায়নও দেওয়া আছে। সেখানে লেখা আছে ট্যাগ নম্বর, ধানের জাতের নাম, লট নম্বর, প্রত্যায়ন ইস্যুর তারিখ, বৈধতার মেয়াদ, নেট ওজন। প্রতিটি ১০ কেজি ওজনের বস্তা। এসব বীজ যশোর জোনের।
খোজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ভ্যানে করে চটের বস্তায় মোড়ানো অবস্থায় এসব বীজ দোকানে আসে। পরে বীজগুলো সরাসরি দোকানে তোলা হয়। এগুলোর মধ্যে ৩০টি বস্তা ভেতরে ঢুকানো হয়। বাকি আট বস্তা দোকানের সামনে রাখা হয়। এর কিছুক্ষণ পর বস্তার মুখ খুলে সরাসরি বিক্রি শুরু করেন দোকানের মালিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম এন্টারপ্রাইজের মালিক সেলিম হোসেন বলেন, আমরা হরিয়ানের একটি ডিলারের কাছে থেকে এগুলো এনেছি। এগুলো তারা বিক্রির পর অবশিষ্ট বীজ নিলামে বিক্রি করে দেন। আমরা দ্বিতীয় হাত থেকে কিনে নিয়েছি।
তিনি আও বলেন, এসব বীজে যাতে পোকার আক্রমণ না হয় সেজন্য কিছুটা বিষ দেওয়া থাকে। তবে সেগুলো বাইরে। সরাসরি ধানে বা গমে নয়। এগুলো খেয়ে যদি ক্ষতি হতো তবে এতে অনেক পাখি মারা যেতো। এখন পর্যন্ত তো সেই রকম কিছু বলতে শুনিনি।
এ বিষয়ে বিএডিসি যশোর জোনের উপ-সহকারী পরিচালক (বীজ বিপণন) মুসা আহমেদ বলেন, চলতি ধান ও গমের মৌসুম শেষ। ডিলাররা বীজ উত্তোলন করার পরও কিছু বীজ থেকে যায়। সব বীজ তো আর বিক্রি করে না। তখন তারা কম দামে বিক্রি করতে পারে, এটি তাদের ব্যপার। এটার বিষয়ে একান্ত এখতেয়ার ডিলারদের।
তিনি বলেন, ডিলাররা কেন বিক্রি করলো সেটি আমরা বলতে পারবো না। আমাদের বীজ বেচার দরকার, আমার বীজ তাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। এই বীজগুলো ২৪ মৌসুমের। এটিতে আগামী বছর ফসল হবে না। তবে আমরা মনে করি এটি বাইরে বিক্রি করা যৌক্তিক না।
বিএডিসি রাজশাহীর উপ-পরিচালক কে এম গোলাম সরওয়ার, বীজের যাতে সংকট না হয় সেই ব্যবস্থা বিএডিসি করে। কোনো কোনো বছর একটু আবাদ কম হয়। ওই বছর তখন বীজ বেচে যায়। এখন সিজন শেষ। ডিলারটা যারা নিয়েছেন তারাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মনে করেন তার ৬১ টাকায় কিনে ৬৯ টাকায় বিক্রি করার কথা। সিজনের পর এসব বীজ খাদ্য বা পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
তবে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাজদার হোসেন বললেন অন্য কথা। তার ভাষায় এসব বীজ পাখিরও খাবার উপযোগী নয়, মানুষেরও খাবার উপযোগী নয়। কেনোনা এসব বীজে অনেক কেমিক্যাল মেশানো হয়। আমরা এটা বিক্রির পক্ষে নই। এটা কেন হচ্ছে আপনারা তদন্ত করতে পারেন।
রাজশাহী গম গবেষণাগারের সাবেক প্রধান বিজ্ঞানী ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমি গতমাসেই যশোরে বদলি হয়ে এসেছি। আমরা অনেক কষ্ট করে এসব বীজ উৎপাদন করি, এরপর বিএডিসিকে দেয়। কিন্তু এবার বেশ চাহিদা ছিল গম বীজের। তবে এমনটি কেন হলো জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, বিএডিসির কাছে আমরা জানতে চাইবো এটি কেন হলো। এটি হবার কথা নয়। বিএডিসির মাধ্যমে বীজ তো কৃষক পাবে। এটি পাখির খাবারের জন্য নয়। পাখির খাবারের জন্য তো আলাদা গম উৎপাদন হয়।
এফএ/এমবি