For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

প্রেমে প্রমাণ দিতে গিয়ে কোটিপতি তারা

Published : Wednesday, 14 February, 2024 at 11:37 PM Count : 158

দুজনে পড়তেন তখন ইন্টারে। সময়টা ২০০৭ সালের কথা। ফার্স্ট ইয়ারে দেখাশোনা হলেও সেকেন্ড ইয়ারে বন্ধুত্ব। তারপর সেটি প্রেমের মোর নেয়। অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিকেই পড়ার সময় গড়ে ওঠে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই সেই সম্পর্কের কথা জেনে ফেলে পরিবারের লোকজন। সম্পর্কে অটল রেখে সাহস করে পারিবারিক টানাপোড়েনের মুখোমুখি হন। দুজনই মা-বাবাকে বোঝান, সময় চেয়ে নেন। পরিবার জানিয়ে দেয়, নিজেদের যোগ্য করে গড়তে পারলে আর বাধা থাকবে না। ২০১১ থেকে শুরু হয় নিজেদের প্রমাণ করার পালা।

২০১৬ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। মাঝখানে কেটে গেছে ১৩ বছর। এর মধ্যে ভালোবাসার সেই চ্যালেঞ্জ উতরে গেছে অনেক আগেই। ভালোবাসা, পরিশ্রম আর উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন স্টেডফাস্ট নামক প্রতিষ্ঠান। কুরিয়ার সেবা প্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে দেড় হাজার মানুষের। ভালোবাসাকে জয় করতে শুরু করা এই উদ্যোগে এখন তাঁরা কোটিপতি। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার দম্পতি কে এম রেদওয়ান বারি জিয়ন ও জোয়াইরিয়া মোস্তারি জ্যোতির এই গল্প বাস্তবতাকেও হার মানায়। ২ বছর বয়সী মেয়ে জাইয়ানা মুনজারিনকে নিয়ে এখন সুখের সংসার তাঁদের।

উচ্চশিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জিয়ন। পরিবারে সবাই চাকরিজীবী। বাবা কাজী মো. শরীফুজ্জামান ও মা নিলুফা ইয়াছমিন দুজনই স্কুলশিক্ষক। এমন পরিবারের সন্তান হয়ে লেখাপড়া শেষ করে তাঁরও চাকরিজীবী হওয়ার কথা। কিন্তু সেপথে হাটেন নি জিয়ন। চিরাচরিত রীতি ভেঙে আগাগোড়া হয়েছেন উদ্যোক্তা। সৃষ্টি করেছেন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। নিজের চেষ্টায় আজ সফল ব্যবসায়ী তিনি। স্ত্রীকেও পাশে রেখেছেন ব্যবসায়। 
 
রংপুর স্টেডফাস্ট কুরিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়ন বলেন, "২০০৯ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। ইলেকট্রিক্যাল ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয়ে ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউএপি)। এ সময় পরিবারের লোকজনেরা জ্যোতির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। ফলে দুজনেরই ডাক পড়ে বাড়িতে। এরপর পরিবারকে বুঝিয়ে শুরু করেন পথচলা। জিয়ন পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। শিখে নেন ওয়েব ডেভেলপিং। ২০১৪ সালে হাটবাজার ডটকম নামের ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেন। এ ব্যবসা করতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হন। সেগুলো চিহ্নিত করে ২০১৬ সালে ঢাকার জিগাতলা এলাকায় মাত্র চারজন ডেলিভারি ম্যান দিয়ে নিজের তৈরি ওয়েবসাইটে শুরু করেন কুরিয়ার সার্ভিস স্টেডফাস্ট। ঢাকা শহরে শুরুতে হোম ডেলিভারি শুরু করেন। ধীরে ধীরে পুরো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরসহ বিভাগীয় শহরসহ সারাদেশে এ সার্ভিস চালু করেন।
জিয়ন জানান, শুরুতে ঢাকা শহরে সবকিছু এত সহজ ছিল না। যখন তিনি ঢাকায় যান, থাকার জায়গা ছিল না। নানান রোগে আক্রান্ত হন। একপ্রকার যুদ্ধ করে তাঁকে টিকতে হয়েছে ঢাকা শহরে। তাই ঢাকা শহরে তিনি যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন, তা যেন তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের হতে না হয়, সে জন্য তিনি কর্মীদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কাজের উপযুক্ত না হন, ততক্ষণ পর্যন্ত নিজ খরচে করান প্রশিক্ষণ। ঢাকার ৫০টি ফ্ল্যাটে কর্মীরা থাকেন। শুধু উচ্চশিক্ষিত নন, কম শিক্ষিত লোকেরাও তাঁর প্রতিষ্ঠান কাজ করছেন। সব ধরনের যোগ্যতার মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি করতে চান তিনি।

জিয়ন বলেন, ‘যখন ধীরে ধীরে কুরিয়ার সার্ভিসের পরিধি বাড়ছিল। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করছিলাম। তখন কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। মানুষ বিশ্বাসই করত না আমার প্রতিষ্ঠানে চাকরির কথা। এলাকার লোকজন ভাবত ঢাকায় নিয়ে তাদের ঠকাব। একজন-দুজন করে এখন গঙ্গাচড়া উপজেলারই ৭০০-এর অধিক কর্মী আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।’

জিয়ন গঙ্গাচড়াকে বেকারমুক্ত করতে চান। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাজারে কীভাবে কাজ করা যায়, সেই স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন দেখেন নিজের প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত উচ্চপ্রযুক্তি সেবা চালু করবেন। ভবিষ্যতে অটোমেশনের মাধ্যমে কাজ করবেন। তাঁর ইচ্ছে ট্রান্সপোর্টেশনে সেরা প্রতিষ্ঠান হওয়ার।

গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ‘জিয়ন গঙ্গাচড়ার গর্ব। সে লেখাপড়া করে অন্যদের মতো চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করার চেষ্টা করেছে। সে আজ সফল। তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানে গঙ্গাচড়ার কয়েক শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে| ভালোবেসে ভালো কিছু করা যায় সেটার উদাহরন জিয়ন।’

এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,