বিদ্যালয়টিতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক ও ভবন। আর শিক্ষার্থীরা যেখানে ক্লাস করছে, সেটি জরাজীর্ণ টিনের ঘর। আর সেই ঘরেই ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শুধু তাই নয়, শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট, বর্ষাকালে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে নেই জানালা।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আনোয়ার উল্লাহ সিকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে রামগতি পৌর এলাকার সবুজগ্রামে আনোয়ার উল্লাহ সিকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই টিনের ঘর দিয়ে শুরু করে শিক্ষা কার্যক্রম। এখনো ওই ঘরেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২০।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ তিন জন শিক্ষক রয়েছেন। উপজেলার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় এ বিদ্যালয়টি সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত। শিক্ষার্থী অনুযায়ী পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত পাঠদান থেকে পিছিয়ে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের একটি জরাজীর্ণ অস্থায়ী টিনের ঘরে চারটি শ্রেণিকক্ষ, একটি দাপ্তরিক কাজ ও শিক্ষকদের বসার জন্য একটি কক্ষ ও একটি পাকা শৌচাগার রয়েছে। বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন না থাকায় পুরাতন ভাঙ্গা টিনের ঘরেই ঝুঁকির মধ্যেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়ে নানা সংকট ও পরিত্যক্ত টিনের ঘরেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, জরাজীর্ণ অস্থায়ী টিনের ঘরে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিকের এবং বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ৩য়, ৪র্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলে। জেলে ও কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতিদিন উপস্থিত থাকে।
স্থানীয়রা বলেন, সীমানা প্রাচীর না থাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ঘরে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করে। খুদে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু বোঝে না। ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ঘরের কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে হচ্ছে। সরকার যদি নতুন ভবনের ব্যবস্থা না করে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও আরও অনেক কমে যাবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছরিন সুলতানা বলেন, ২০১৮ সালে এ বিদ্যালয়ে যোগ দেই। গত বছরের শেষের দিকেও বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ টিনের ঘরের কথা উল্লেখ করে নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জরাজীর্ণ টিনের ঘরের দুরাবস্থা ও নতুন ভবনের চাহিদার কথা জানালেও কোনো কাজ হয়নি। ফলে বিদ্যালয়ের নানা সংকট নিয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই আমরা পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সঙ্কট, বর্ষাকালে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের জায়গা নিচু হওয়াতে বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে থাকে। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে নেই জানালা, ফলে বিদ্যালয়ের ফ্যানসহ অন্যান্য আসবাবপত্র চুরি হয়। বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নেই। কিছুদিন আগেও বিদ্যালয়ের সুপেয় পানির কল চুরি হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবু ইউসুফ বলেন, উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকায় এ বিদ্যালয়সহ চর বালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ পূর্ব চর আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামও রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)'র রামগতি উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ভবন সংকটের কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার মান ব্যাহত হচ্ছে এবং ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
-এমএ