For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

কুবির তিন অনিয়মের দায় উপাচার্যের উপর চাপালেন ট্রেজারার

Published : Sunday, 4 February, 2024 at 3:31 PM Count : 515


কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষকদের তোপের মুখে আলোচিত তিন অনিয়মের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈনকে দোষারোপ করলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: আসাদুজ্জামান।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) "সার্ভিস রুলস, একাডেমিক রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন" (পরীক্ষা, ছুটি এবং আপগ্রেডেশন বিধি) শিরোনামে একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। এতে রিসোর্স পারসন হিসেবে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ।

কিন্তু এমন একটি প্রশিক্ষণে নির্ধারিত বিষয়ের উপর কোন বিশেষজ্ঞকে না রেখে কোষাধ্যক্ষকে রিসোর্স পারসন হিসেবে কেন রাখা হয়েছে, অংশগ্রহণকারী শিক্ষকগণ বিষয়েটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এসময় শিক্ষকগণ কোষাধ্যক্ষের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচিত বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের প্রাপ্ত ভাতা থেকে কোন প্রকার নীতিমালা ছাড়াই ভাইসচ্যান্সেলরের নামে বৃত্তি প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ খরচে গেস্ট হাউজ রাখা হলেও শিক্ষকদের বঞ্চনায় ডুবিয়ে সেটি উপাচার্যের দখলের কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-২০০৬ ও ইউজিসির আইন অমান্য করে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতিতে বৈষম্য সৃষ্টির পাশাপাশি সঠিক নিয়মে আপগ্রেডেশন না দেওয়াসহ গুরুতর অনিয়মের বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষকগণ প্রশ্ন তোলেন। পরে এসকল অনিয়মের দায় উপাচার্যের উপর চাপান কোষাধ্যক্ষ।

এবিষয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, 'আমরা ট্রেজারারের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর পিএইচডি নথিভুক্তি, উপাচার্যের পছন্দের ব্যক্তিদের পদোন্নতি স্থায়ীকরন এবং সকল শর্ত পূরণ হলেও ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে অন্য শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রদানে নিয়ম বহির্ভূত শর্তারোপের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বিব্রতবোধ করেন। 

তিনি বলেন, “এসব সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না। হায়ার অথরিটি আছে; বোর্ড আছে। উপাচার্য এ ব্যাপারে ভাল বলতে পারবেন।” এভাবে তিনি আমাদের প্রশ্ন এড়িয়ে উপাচার্যের উপর দায় চাপান। বস্তত এসকল অনিয়মের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।'

প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনকারী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান জানান, ' আমি কোষাধ্যক্ষের কাছে জানতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়ম আছে, কিন্তু এসব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে কোন আইনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে? যোগ্যতা থাকার পরও কেন প্রমোশন আটকিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ খরচে গেস্ট হাউজ রাখা হয়েছে, কিন্তু শিক্ষকদের বঞ্চনায় ডুবিয়ে উপাচার্য একাই সেটি কিভাবে দখল করতে পারেন? যে পদ্ধতিতে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে সেটার খাত নিয়েও কোষাধ্যক্ষকে প্রশ্ন করলে তিনি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। উল্টো শিক্ষকগণ  বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এটির সম্পূর্ণ দায়ভার উপাচার্যকে চাপিয়ে দেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি উপাচার্য একাই সকল দুর্নীতির মূল হোতা?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহযোগী অধ্যাপক বলেন, শিক্ষক পদোন্নতির নীতিমালা অনুযায়ী  আবেদনের সময় তো Q1 এবং Q2  নীতিমালা ছিল না। কিন্তু এসব নিয়ে পদোন্নতির সময় আমাদের আটকে দিচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে যখন প্রশ্ন করা হয় তখন কোষাধ্যক্ষ বলেন "এসব বিষয়ে আমার হাতে থাকে না। এখানে হায়ার অথরিটি আছে। যাচাই বাছাই বোর্ড আছে তাদের উপর নির্ভর করে।" আবার উপাচার্য তার নিজের কাছে গেস্ট হাউজের চাবি রেখে দেওয়াতে আমাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এরপর তার অপছন্দের শিক্ষকদের পদোন্নতিতে নিয়মবহির্ভূত শর্তারোপ করছেন। শিক্ষকরা এসব প্রশ্নবাণে জর্জরতি করলে তখন কোষাধ্যক্ষ বিব্রত হয়ে বলেন, "এসব বিষয়ে উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।"

এদিকে শিক্ষকদের তোপের মুখে উপাচার্যের উপর দায় চাপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: আসাদুজ্জামান বলেন, উপাচার্যের উপর দায় চাপানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ অসত্য। শিক্ষক  নিয়োগ এবং আপগ্রেডেশনের বিষয়টি হায়ার অথোরিটির বিষয়। সেখানে উপাচার্যসহ অন্যান্য বোর্ড মেম্বাররা সিদ্ধান্ত নেন। এতে কাছের লোকদের সুযোগ দেয়া কিংবা দূরের লোকদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি সম্পূর্ণ ওনাদের। আমি সেখানে ছিলামও না। কি হয়েছে জানিও না।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজ নিয়ে বিড়ম্বনা ও মেধাবৃত্তির বিষয়ে উপাচার্যের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে শিক্ষকদের কাছে কোষাধ্যক্ষের দেয়া মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "একটা সময় ভর্তি পরীক্ষার লভ্যাংশ থেকে শিক্ষকদের একটি অংশ দেয়া হতো। যা পুরোপুরি প্রচলিত নিয়ম। কিন্তু বর্তমানে সেই অর্থ দিয়ে মেধাবৃত্তি দেয়ার বিষয়টি ‘নিয়ম মেনে করা হয়নি’ প্রশিক্ষণে আমার দেয়া এমন মন্তব্য সঠিক নয়।"
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শিক্ষকদের তখন বলেছি গেস্ট হাউজ অব্যবস্থাপনার বিষয় নিয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলবো।

জানা যায়, ড. মো. আসাদুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক। পাশাপাশি তিনি বায়ো সায়েন্স, বায়ো ইলেক্ট্রনিক, বায়োটেকনোলজি, পলিমার সায়েন্সসহ কয়েকটি বিষয়ে ইতোপূর্বে গবেষণার কাজ করেছেন।

তবে কোষাধ্যক্ষের দায় ছাপানোর বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের দপ্তরে গিয়ে ২ ঘন্টা অপেক্ষায় খাকলেও ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি প্রতিবেদককে সাক্ষাৎ দেননি। উপাচার্যের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কোন সাড়া দেননি। মুঠোফোনে ক্ষুধেবার্তা পাঠালেও তার উত্তর পাওয়া যায়নি।

এইয়/এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,