দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সংসদে এবার সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নির্বাচনের পালা। যাঁরা দলের মনোনয়ন পান, তাঁরাই হন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। এবার রাজশাহী থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত এক ডজন নেত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হতে দলের মনোনয়ন চান। তাঁদের অনেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগে মহানগর আওয়ামী লীগ কিংবা সহযোগী সংগঠনের কাউকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি করা হয়নি। তাই এবার মহানগর থেকেই কাউকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি করা হতে পারে। তাই কপাল পুড়তে পারে রাজশাহীর বর্তমান সংরক্ষিত এমপি আদিবা আনজুম মিতার। তবে মিতা এবারও মনোনয়ন পেতে তদবির করছেন।
একাদশ সংসদে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় এ নেত্রী হঠাৎ করেই সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হন। তাঁকে নিয়ে কোনো আলোচনা ছিল না। এমপি হয়েও তাঁর রাজনীতি ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক। এবার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনীর সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদিও তিনি কোনো চেষ্টা-তদবির করছেন না। শাহীন আক্তার রেনী জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের পূত্রবধূ এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সহধর্মিণী। তিনি এমপি হবেন এমন আলোচনা অনেক দিন ধরেই।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, একাদশ সংসদে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আলাদা আলাদা নারী এমপি করা হয়েছিল। এবার রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একজনকেই সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান দুই সংরক্ষিত এমপিই বাদ পড়তে পারেন। আসতে পারে নতুন মুখ। শহীদ জাতীয় নেতার পরিবার হিসেবে শাহীন আকতার রেনীকে এমপি করার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া এই পরিবারের আরেক নারী মালিহা জামান মালাও আছেন আলোচনায়। বর্তমানে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
এছাড়া, এবার সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হতে চান রাজশাহী মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সালমা রেজা, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ইফফাত আরা কামাল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন, সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আখতার মিতা, সহসভাপতি রোকসানা মেহেবুব চপলা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পূর্ণিমা ভট্টাচার্য, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নিঘাত পারভীনসহ জেলা ও মহানগরের আরও কয়েকজন নারী।
তবে ঘুরেফিরে আলোচনা শাহীন আকতার রেনীকে নিয়ে। তিনি ইতোমধ্যে নিজেকে নারীনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশিষ্ট সমাজসেবী হিসেবেও তিনি নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন। রাজশাহী মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ডেই রয়েছে তাঁর পদচারণা। এবার তাঁকেই সংরক্ষিত এমপি করা হবে বলে অনেকের ধারণা।
শাহীন আকতার রেনী কোনো কারণে এমপি না হলে আসতে পারেন ওই পরিবারের আরেক নারী মালিহা জামান মালা। তিনি সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো বোন। ২০০৪ সালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তাঁর রাজনীতি শুরু। ছিলেন মহানগর মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ১০ বছর ধরে আছেন যুগ্ম সম্পাদকের পদে। এছাড়া তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আগের কমিটিতেও তিনি এ পদে ছিলেন।
জানতে চাইলে মালিহা জামান মালা বলেন, আমি চাই আগে আমাদের ভাবি শাহীন আকতার রেনীর মূল্যায়ন হোক। তিনি না চাইলে আমি হতে চাই। কারণ, আমিও দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। মানুষের সঙ্গে আছি। তাদের সেবা করার সুযোগ চাই। আমি আমার ভাই খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে আলোচনা করব। তিনি যদি আমাকে মনোনয়নপত্র তুলতে বলেন তাহলে আমি তুলব। এখনো বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়নি।
নারীনেত্রী শাহীন আকতার রেনী বলেন, এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটিই চূড়ান্ত। সংরক্ষিত আসনের জন্য আমি মনোনয়নপত্র তুলব কি না তার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ইফফাত আরা কামালকে নিয়েও শহরে কিছুটা আলোচনা রয়েছে। তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আলী কামাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি এবার রাজশাহী-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার জন্য তিনি সরে যান। সে হিসেবে সংরক্ষিত আসনের জন্য তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
আরএইচ/এমবি