রাঙামাটিতে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ফুড অ্যান্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল-২০২৪। বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ০৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। রাঙামাটি চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসরত ১৬ জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাদ্যসামগ্রী পরিবেশন করা হবে।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত এই মেলা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে মাঠে অনুশীলন করা খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকদের মধ্যে। ফুড ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে তিন দিন মাঠে অনুশীলন বন্ধ থাকার কথা থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছে ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত তিন দিনব্যাপী মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করবেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন দেশে দায়িত্বপালনকারী অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতরাও অংশগ্রহণ করবেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড মেলা আয়োজন করলেও এর পরিকল্পনায় রয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমার স্ত্রী নন্দিতা খীসা।
বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ফুড ফেস্টিভ্যালে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, তঞ্চঙ্গা, বাঙালি, অহমিয়া, খিয়াং, খুমি, গুর্খা, চাক, পাংখোয়া, বম, লুসাই, রাখাইন এবং সাঁওতালসহ ১৬টি জাতির মানুষ তাদের সুস্বাদু খাবার সামগ্রীসমূহ নিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করবেন। ফুড অ্যান্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও।
এদিকে, রাঙামাটির খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য একমাত্র মাঠ রাঙামাটি চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়াম। প্রতিদিন বিকেলে এই মাঠেই ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবলসহ অন্যান্য খেলার অনুশীলন করে থাকেন খেলোয়াড়রা। এছাড়া অনেকেই হাঁটাহাঁটি, ব্যয়ামও করে থাকেন। ফুড ফেস্টিভ্যালকে কেন্দ্র করে বন্ধ থাকবে অনুশীলনের কাজও।
ক্রীড়া সংগঠকরা জানিয়েছেন, আগামী ৭-৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে রাঙামাটি পৌরসভা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ। তবে ০১ ফেব্রুয়ারি থেকে খেলা শুরুর কথা থাকলেও ফুড ফেস্টিভ্যালকে কেন্দ্র করে তা পেছানো হয়েছে। সময় পেছানো হলেও ক্রিকেটাররা আগামী তিন দিন অনুশীলনের সুযোগ পাবেন মেলার কারণে। এছাড়া ফুটবলসহ অন্যান্য খেলার অনুশীলনও থাকবে বন্ধ।
রাঙামাটি ডায়নামিক ফুটবল ক্লাবের সদস্য হিসেবে স্টেডিয়ামে প্রতিদিন অনুশীলন করেন রিমেল চাকমা। তিনি জানান, আজকে শেষ দিনের মতো অনুশীলন হচ্ছে। আগামী তিন দিন মেলার কারণে আমাদের অনুশীলন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
একই কথা জানালেন মাঠে রিমেলের সঙ্গে অনুশীলনরত অন্যান্য খেলোয়াড়রা।
এ প্রসঙ্গে জানতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আজমকে ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক রাঙামাটি পার্বত্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক সদস্য জানান, উন্নয়ন বোর্ড চাইলে তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনেও এই আয়োজন করতে পারত। কিংবা বিকল্প ভেন্যু হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ছিল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার জিমনেসিয়ামের পাশে খালি জায়গা ছিল। সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের ভেন্যুতে যেখানে বিঝু মেলাসহ রাঙামাটির বড় বড় অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে। ক্রীড়া সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্বের গাফিলতির থাকায় তারা (উন্নয়ন বোর্ড) এখানে সুযোগ পেয়ে মেলা বসিয়েছে। রাঙামাটিতে এমন উৎসব ও মেলা করার বিকল্প ভেন্যু থাকলেও খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য বিকল্প কোনো মাঠ নেই। এখন ক্রিকেট লিগের অনুশীলন ছাড়াও অন্যান্য খেলোয়াড়রা অনুশীলন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এটা অন্যায় হয়েছে। ডিএসএর কর্তারা এসব বিষয়ে সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেন না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক ও ফুড অ্যান্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল- ২০২৪ আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মংছেনলাইন রাখাইন জানান, আমরা খেলা বন্ধ রাখার পক্ষে নই, খেলার জায়গায় খেলা চলবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে আমরা খেলার মাঠের বাইরে মেলার স্টল বসিয়েছি। তিনিও মাঠের ভেতর মেলা বসাতে দেননি, আমরাও বসাইনি। এক সাইটে খেলা চলুক, আরেক সাইটে মেলা চলুক; আমরা সেভাবেই কথা বলে এই আয়োজনটা করেছি।
ফুড ফেস্টিভ্যালের পরিকল্পনাকারী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী নন্দিতা খীসা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তিন হিল ডিস্ট্রিক্টে উন্নয়ন করে থাকে। উন্নয়ন করা মানে তো তাদেরকে (বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী) সঙ্গে নিয়েই উন্নয়ন করা। তাই আমিও মনে করেছি যারা পিছিয়ে পড়া মানুষ, এটা তাদের জন্য উন্নয়নের মতোই। তাদের যদি আমরা টেনে তুলতে পারি, সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারি, সেটাও তো একটা উন্নয়ন। তাই আমরা এই বিষয়টিকে এভাবেই দেখেছি।
-এসআই/এমএ