For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

মোরেলগঞ্জে ডাকঘর কর্মচারীদের মানবেতর জীবন

Published : Wednesday, 17 January, 2024 at 5:05 PM Count : 139



সময়ের ব্যবধানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে যোগাযোগে আমুল পরিবর্তন হলেও সরকারী ডাক ব্যবস্থার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু মানুষের নিত্য নতুন চাহিদার সাথে তাল মিলাতে পারছে না ডাক বিভাগ।

সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মোরেলগঞ্জের শাখা ডাকঘরগুলোর কর্মচারীরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ভবন নেই, আসবাব পত্র সংকট, বেতন বৈষম্য, নেই পেনশন ও ছুটি, এ ধরনের সমস্যার মধ্যে ডুবে আছে শাখা ডাকঘরের কার্যক্রম। এ সকল ডাকঘরের ভবন বা অফিস আজও নির্মিত হয়নি। ফলে এর কার্যক্রম চলে পোষ্ট মাষ্টারদের বাসায় কিংবা ভাড়া করা কোন দোকানে। 

উপজেলা ডাকঘর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ উপজেলায় প্রধান ডাকঘরসহ ছোট-বড় ২৬ টি ডাকঘর রয়েছে। এর মধ্যে একটি সরকারী এবং ২৫ টি বে-সরকারীভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে রয়েছে কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য, পেনশন নেই, নেই উৎসব ভাতাও, যোগাযোগের সমস্যা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, আসবাবপত্র বলতেও কিছু নেই। নেই কোন সরকারী ছুটি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম হিসেবে ডাকঘর এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এর সাথে তাল মিলিয়ে শাখা ডাকঘরগুলোর অবকাঠামোগত কোন উন্নয়নের ছোয়া আজও লাগেনি। 

গ্রামের প্রত্যন্ত মানুষের কাঙ্খিত সেবা দেয়া, খুব দ্রুত ও স্বল্প সময়ের মধ্যে চিঠি, পার্শেল, মানিওয়ার্ডার এসব প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বে-সরকারী ভাবে শাখা ডাকঘরগুলো স্থাপিত হয়েছিল। 

ডাকঘর স্থাপনের পূর্বে কিছু নিয়ম-কানুন বেঁধে দেয়া হয়েছিল প্রস্তাবিত। ডাকঘরের আওতায় সেই এলাকার জনসংখ্যা ১৫ হাজার ৫২৩ জন থাকতে হবে। একটি অফিস থেকে অন্য অফিসের দূরত্ব কমপক্ষে দুই মাইল হতে হবে। শাখা অফিসের জন্য যা ব্যয় হবে তার চেয়ে আয়ের পরিমাণ বেশি হতে হবে এবং সময়সূচী অনুযায়ী প্রতিদিন চার ঘন্টা অফিস খোলা থাকবে শাখা ডাকঘরের কার্যক্রম। জনগনের সেবা করার সাথে সাথে সরকারের রাজস্ব আয়ের বড় উৎস ডাক বিভাগ। ডাক বিভাগের কার্যক্রম দু'ভাগে বিভক্ত। যেমন একটি হচ্ছে নিজস্ব কাজ, অন্যটি এজেন্সী কাজ। নিজস্ব কাজ হচ্ছে, খাম, পোষ্ট কার্ড, টিকেট বিক্রি, মানিওয়ার্ডার প্রেরণ, পোষ্টাল অর্ডার বিক্রি, রেজিস্ট্রি চিঠি ও রেজিষ্ট্রি পার্শেল, বীমা পার্শেল ইস্যু, জিইপি ও বিলি ইত্যাদি এবং এজেন্সির কাজ হচ্ছে রাজস্ব টিকেট বিক্রি, সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম সাধারণ হিসাবে ও মেয়াদী হিসাব, প্রাইজবন্ড বিক্রি, ইনকাম ট্যাক্স, টেলিফোন বিল জমা নেয়া, শুদ্ধকর ও বিক্রয় কর ডাক জীবন বীমা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ ইত্যাদি।

প্রয়োজনের তুলনায় জনবল ও কাগজ পত্র খুবই কম। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগনকে সেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে শাখা ডাকঘর। এ সকল ডাকঘরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩টি পদ রয়েছে। ১জন পোষ্ট মাষ্টার, ১জন পিওন, ও ১জন রানার। এরা সরকারের বেতন ভুক্ত কোন কর্মচারী নয়। সামান্য সম্মানি ভাতা পায়। ফলে শাখা ডাকঘরের কর্মচারীরা জনগনকে কাঙ্ক্ষিত  সেবা দিতে পারছে না। এদের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য চাহিদা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা ও জনবলের ব্যবস্থা করা দরকার। এদের নিজস্ব কিছু সমস্যা থাকা সত্তেও দূর-দূরন্তের মানুষের কাছে এরা সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এর পরেও কর্মচারীরা কার্যপরিচালনার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। অফিস চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ফরম নেই।

শাখা ডাকঘরের পোষ্টমাষ্টার দুলালী রানী সমাদ্দার ও শোভানা আক্তার  জানান, অফিস চালানোর প্রয়োজনীয় সরবরাহ ফরম আমার কাছে এতকম আসে, যা দিয়ে কাজ করা খুবই দূরহ ব্যাপার। ফলে শাখা ডাকঘরের পোষ্টমাষ্টারগণ ফরম সংক্রান্ত কাজে প্রয়োজনীয় ফরম পায় না। এতে করে তাদের পক্ষে কাজ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে, এবং আমরা এতো পরিশ্রম করে যে সম্মানি ভাতা পাই তা দিয়ে সংসার চালানো আমাদের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। 

পোষ্টমাষ্টারদের ব্যাগে কিংবা প্রধান ডাকঘরের সমান শাখা ডাকঘরের কর্মচারীরা কাজ করছে। কিন্তু গ্রামে যারা কাজ করে তারা সরকারী বেতনভুক্ত নয়। শুধুমাত্র সম্মানীভাতা পায়। এজন্য তাদের এ কাজের পাশাপাশি অন্য যে কোন কাজ করতে হয়। এসব কারনে তাদের কাজের প্রতি গুরুত্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারন মানুষ।  বর্তমানে পোষ্টমাষ্টারদের জন্য ৪৪৬০ টাকা, পোস্টম্যানদের জন্য ৪৩৫৪ টাকা। রানারদের দেয়া হয় ৪১৭৭ টাকা। এই টাকায় তাদের সংসারের খরচ হয় না। সারাদিন পায়ে হেঁটে পিয়নদের বাড়ী বাড়ী ঘুরে অনেক চিঠি বিলি করতে হয়। এত শ্রমের পরেও চলাচলের জন্য তারা পায়না কোন পরিবহন খরচ। চলাচলের জন্য পিয়নদের অন্তত একটি বাইসাইকেল দেয়া প্রয়োজন। এসব ডাকঘরগুলোর সমস্যা অন্তহীন। জনগনের প্রয়োজনীয় সেবার মান বাড়াতে পারলে ডাক বিভাগের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে সরকারেরও আয় বাড়বে। সব মিলিয়ে শাখা ডাকঘর গুলো অন্তহীন সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এ বিষয় সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

একে/এসআর


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,