নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাত ১০টার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নাটেশ্বর গ্রামে পলাশের রক্তাক্ত মরদেহ পাড়ে থাকতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত শাহিদুজ্জামান পলাশ (৩৫) উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে। তিনি নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া (কাঁচি) প্রতিক প্রার্থীর নির্বাচনী পোলিং এজেন্ট পূর্ব মির্জা নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে।
এ হত্যাকাণ্ড নির্বাচনী সহিংসতা বলে ধারণা অনেকের। তবে পলাশের মৃত্যুর কারণ তাৎক্ষণিক ভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, পলাশ পাঁচ বছর আগে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। এরই মধ্যে ইতালি যাওয়ার জন্য টাকাও জমা দিয়েছিলেন। সদ্য শেষ হওয়া সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভুইঁয়া মানিকের পক্ষে একটি কেন্দ্রে এজেন্টের দায়িত্বে ছিলেন পলাশ।
পলাশের ফেসবুক আইডি দেখে নির্বাচনে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও তিনি ‘অল মানিক ভাই’ লিখে একটি পোস্ট করেছিলেন।
নাটেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন খোকন জানান, শনিবার সন্ধ্যায় নিহত হওয়ার আগে শাহেদুজ্জামান পলাশ স্থানীয় বাক্সর হাটে অবস্থান করছিলেন। রাতে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে লাশ পার্শ্ববর্তী খালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে বলে শুনেছি।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া ডেইলি অবজারভারকে জানান, শাহেদুজ্জামান পলাশ আমার নির্বাচনী পোলিং এজেন্ট ও আমার কর্মী ছিলেন। নির্বাচন চলাকালে আমার প্রতিপক্ষ আমাকে ও আমার কর্মীদেরকে অব্যাহত হুমকি দিয়ে আসছিল। এ সকল ঘটনায় সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করার পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মাথা ভারী কোনো জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
তিনি জানান, ঘটনাস্থলে এসে নিহতের স্ত্রী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পলাশ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। তার বাড়িতে (ঘটনাস্থল) ঘরসহ একটি মুরগির খামার ছিল। এগুলোর দেখভালে পলাশ প্রায়ই বাড়ি যেতেন।
ওসি জানান, শনিবার বিকেলে কয়েকটি মুরগি বিক্রি করার পর খামারে কর্মরত দুই কর্মচারী সন্ধ্যায় চলে যায়। এরপর থেকে পলাশ একা খামারে ছিলেন। রাত ৮টার দিকে স্ত্রীকে ফোন করে তিনি জানান, খামার থেকে একটি হাঁস পার্টিতে গিয়ে রাতে বাড়ি ফিরবেন। এরপর রাত ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন তার ঘরের পাশে পলাশের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং হত্যার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে জানা যাবে কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
নোয়াখালীর সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) নিত্য নন্দন দাস ডেইলি অবজাভারকে জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি নিতান্তই অরাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে হয়েছে। এলাকায় নিহতের অসংখ্য শত্রু রয়েছে। তারা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করতে পারে। এ ঘটনায় অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্ততি চলছে।
-এনএইচ/এমএ