শেষ জীবনে কি করবেন সেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বিকেলে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি তাঁর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি গ্রামে এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াবো, ভ্যানে করে ঘুরবো। ঢাকা শহরে তো আমার বাড়িঘর নাই। গ্রামে এসে গ্রামের বাড়িতেই শেষ জীবন কাটাবো।
তিনি বলেন, 'কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার মানুষই আমার আপনজন। আমার এই নির্বাচনটাও তারা করে দিয়েছেন। কাজেই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যবান যে আমার নিজের জায়গা নিয়ে চিন্তা করতে হয়না। সবাই ছুটাছুটি করে, কিন্তু আমি তো সময় পাইনা। আমাকে সারা বাংলাদেশ দেখতে হয়। এবারের নির্বাচনও আপনারা করেছেন। বিশেষ করে মহিলাদের মিছিল দেখে এতো ভালো লেগেছে যে বলতে পারবো না।'
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'তিনি বলছিলেন আমরা না কি ১০০ বছরে ক্ষমতায় আসতে পারবো না। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা কখনো বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবে না। আসলে আল্লাহ কাকে যে কখন কি করে তা ঠিক করে রেখে দেয়। তার অভিশাপ আমার জন্য আশির্বাদ হয়ে যায়, আর তার জন্য প্রযোজ্য হয়ে যায়।'
তিনি বলেন, 'চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। ষড়যন্ত্র এখনো আছে। এই খুনিরা, চক্রান্তকারীরা যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার করেছি তাদের একটা চক্রান্ত আছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা চক্রান্ত আছে। আমাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দেশটার প্রতি অনেকেরই নজর আছে। কাজেই এখানে বসে কেউ অন্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, এখান থেকে কোনো দেশে আক্রমণ করবে সেটা তো আমি মেনে নেব না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমরা স্বাধীন ভাবেই চলবো। আমাদের দেশ ছোট কিন্তু জনসংখ্যা আছে। জনগণই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি যখন নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিলাম যাতে যে কেউ দাঁড়াতে পারে। উদ্দেশ্য ছিল আমার যাতে ভোট বেশি আসে। আর প্রতিযোগিতাটা হয়।'
কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি ইলেকশন করবে না, ওরা যে করবে না সেটা আমরা জানি। ওরা করবে ওদের নেতা কোথায়? যারা নির্বাচন করে তাদের সামনে একজন থাকে প্রধান হয়ে, যে দেশ চালাবে। ওদের কারো তো সে যোগ্যতা নেই। একজন তো দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতি আর এতিমের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আরেক জনতো গ্রেনেড হামলা মামলা, অস্ত্র চোরাকারবারী, মানিলন্ড্যারিং এর সাথে জড়িত। এটা কিন্তু আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই খুঁজে বের করেছে। তারা স্বাক্ষী দিয়ে গেছে। তাদের স্বাক্ষীতেই তার সাজাও হয়েছে। তবে এদের লজ্জা নাই। এরা একজনকে এ রকম করবে আবার কখন কাকে পছন্দ করে নিয়ে আসে তা ঠিক নেই।'
তিনি বলেন, 'আসলে বিএনপির যেতেহু সামনে নেতৃত্ব নেই তাই তারা ইলেকশন করবে না। তারা ইলেকশন বানচাল করতে চেয়েছিলো। আগুন দিয়ে পোড়ানো, সবচেয়ে জঘন্য কাজ এই যে রেলে আগুন দিয়ে মা আর শিশু যেভাবে পুড়ে কংঙ্গাল হয়ে গেল, যাত্রীসহ বাসে আগুন দেয়া। ২০১৩ সালেও এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ১৪-তে করলো, ১৫-তে করলো। এবার আবার শুরু করলো।'
তিনি আরও বলেন, '২৮ অক্টোবর পুলিশকে যেভাবে পিটিয়ে মারা, সাংবাদিকদের উপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, জাজেজ কোয়ার্টারে হামলা জঘন্যতম কাজ করে তারা নিজেদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এর আগে যতদিন শান্তিপূর্ণ মিছিল মিটিং করেছে আমরা বাঁধা দিইনি। তখন তাদের অবস্থা একটু ভালো ছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর তাদের আসল রূপ বের হয়ে আসে। তাদের সন্ত্রাসী চেহারাটা যখন জনগণ দেখলো যে অ্যাম্বুলেন্সে রুগী যাচ্ছে, সেই অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ঢুকে পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ করলো সেখানে কতগুলো অ্যাম্বুলেন্স ভাংলো-পোড়ালো, গাড়ি ভাংলো-পোড়ালো।
হাসপাতালে কি কেউ আক্রমণ করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'ওই ইসরাইলেরা করছে প্যালেস্টাইনে। আর তারেক জিয়ার হুকুমে বিএনপি-জামায়াত করছে আমাদের দেশের মানুষের উপর। হাসপাতাল আর অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করে তারা দেখালো যে তারা ওদের প্রেতাত্তা বা ওদেরই লোক।'
তিনি বলেন, 'আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। আমরা নতুন কেবিনেট করেছি। সেটাও তাদের লাগে। শুনলাম বলছে এতো তাড়াতাড়ি কেন সরকার করলো। আমাদের তো সব তৈরী আছে আমরা করবো না কেন? আমরা সিদ্ধান্ত নিতে কখনো পিছপা হইনা। জানি ইলেকশন হবে। ইলেকশনে জিতলে কি করবো এটা তো আগেই তৈরী করা থাকবে। তাহলে সময় লাগবে কেন? আমি সময় নষ্ট করবো কেন? আমার কাছে একটা দিনেরও মূল্য আছে। আমাদের তো উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আবার দেখলাম তাদের অফিসের তালা ভাংচ্ছে। সেই রবীন্দ্রনাথের গানটাই মনে পড়ে ”ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি, কে আমারে নিয়ে যাবি” আমি ঠিক জানি না রিজভী সাহেব এই গান গাইতে গাইতে তালা ভাংচ্ছিলো কি না? আর তালা ভেঙ্গে কাকে বের করলো তাও জানি না। বলে যে চাবি খুঁজে পাচ্ছে না, তাহলে তালাটা লাগালো কে? এই তালার কোন সিলগালা ছিলো না কাজেই এটা পুলিশ লাগায়নি। একটা ভালো তালা তারা হাতুড় দিয়ে ভাংচ্ছে। এটা একটা নাটক। এই নাটক করে করে মানুষকে কিছু দিনের জন্য ধোকা দেয়া যায়। সব সময়ের জন্য না। যারা মদদদাতা তারা আবার খুশি হয়ে কাছে টেনে নেয়।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখা। জিনিসের দাম যেটা বেড়ে গেছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা, আমি গ্রামেগঞ্জে খুব অসুবিধা দেখি না। কিন্তু যারা নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে তাদের একটু সমস্যা। ঢাকার শহরে একটু বেশি। সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় সবসময় একটু বেশি। বাজারে কিন্তু জিনিসের অভাব নাই। খাদ্যের কোনো ঘাটতি নাই। কিন্তু মনে হয় যে কেউ জিনিসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে হয়রানি করে। সেটাও আমাদের যথাযথ ভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে। আর আমাদের উৎপাদনটা বাড়াতে হবে।
-এমএইচ/এমএ