দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। শনিবার সকাল ৯টার দিকে এই জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) জরুরী ভাবে ২০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে।
এককের ঘরে তাপমাত্রা নেমে এসেছে। অপরদিকে টানা পাঁচ দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। জনজীবনে দেখা দিয়েছে জবুথবু অবস্থা।
প্রচন্ড শীতের কারণে বোরো বীজতলা, আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বোরো বীজতলা।
দিনমজুর ও সাধারণ মানুষ কাজে বের হতে পারছেন না। যারা বের হচ্ছেন তাদের অনেকেই কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ছিন্নমূল মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, শনিবার ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস দেশের সর্বনিম্ন তাপামাত্রা দিনাজপুরে রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত ০৯ জানুয়ারি দিনাজপুরে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ জানুয়ারি ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ১১ জানুয়ারি ১১ ডিগ্রি ও ১২ জানুয়ারি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। আগামী কয়েকদিনে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে।
শনিবার সকালে মানুষ বিক্রির হাট হিসেবে পরিচিত ষষ্টীতলার মােড়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকের খুব একটা ভিড় নেই। শীতের কারণে মানুষ কাজে আসতে পারেনি।
বাবুল হোসেন নামে একজন বলেন, এখানে প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার শ্রমিকের সমাগম ঘটে। কিন্তু গত ৫ দিন ধরে শীতের কারণে শ্রমিকরা আসতে পারছেন না। আজকে এতো বেশী শীত যে ১০০ জন শ্রমিকও আসতে পারেনি। কাজও নেই।
সদর উপজেলার উমরপাইল গোয়াল পাড়া এলাকার কৃষক মঞ্জুরুল ইসলাম ও রাজাপুকুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম নামে দুই কৃষক বলেন, শীতের কারণে বোরো বীজতলা কুকড়ে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই শীত থেকে বোরো বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে। যাতে শীত বীজতলায় পড়তে না পারে।
বিরল উপজেলার রসুলশাহপুর গ্রামের কৃষক জুলফিকার আলী বলেন, তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। শীত ও কুয়াশার কারণে আলুর গাছে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। তাই প্রতিদিন মিটামিন স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে করে আলু উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুরে ষ্টেশনে থাকেন সুমি (৩৫)। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায় পুরাতন শীতের কাপড় জড়িয়ে রোদের অপেক্ষায় বসে আছেন। কিন্তু সূর্যের দেখা মিলছেনা।
তিনি বলেন, প্রত্যেকবার শীতবস্ত্র পেলেও এবার কেউ এখনো শীতবস্ত্র দেয়নি।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, চলতি শীত মৌসুমে মোট ৬২ হাজার শীতবস্ত্র ভাগ করে বিতরণের জন্য প্রত্যেকটি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। এই শীতবস্ত্রগুলো বিতরণ প্রায় শেষের দিকে। নতুন করে আরও ২০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্স পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়- খুব দ্রুতই এই শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে।
সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, শীতজনিত রোগী আসছে। তবে সেটা স্বাভাবিক। স্বাস্থ্য বিভাগের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে, দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসাপাতাল ও অরবৃন্দ শিশু হাসপাতালে খবর নিয়ে জানা যায়, রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক রয়েছে।
-এএইচ/এমএ