বনের গাছ কেটে সরকারি জায়গায় ভাটা নির্মাণের চেষ্টা
Published : Wednesday, 10 January, 2024 at 12:20 PM Count : 285
ভোলার চরফ্যাশনে বন বিভাগের গাছ কর্তন করে সরকারি জায়গায় ইট-ভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মো. নুর ইসলাম নামের এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি ও একই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
তার ভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় ভূমিহীন পরিবারগুলো। তাদের বসতি জায়গা থেকে উৎখাতের ভয়ভীতি দেখিয়ে এ ভাটা নির্মাণ করার পরিকল্পনা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মাইনউদ্দির ঘাটের উত্তর পাশে চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-২ এর বেড়িবাঁধের জায়গায় বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারের বসতঘর ভেকু মেশিন দিয়ে ভাংচুর করে এবং ৫ কপাট বন বিভাগের গাছ কেটে সরকারি প্রায় তিন একর জমির মাটি কেটে ইটভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুবলীগ নেতা নুর ইসলাম (নয়ন)। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের বন বিভাগ ও কৃষি, এবং আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারগুলো কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মো. ইউনুচ বলেন, এখানে ইটভাটা নির্মাণ না করার জন্য তাদের বলি। তারা আমাদের কথা না শুনে জোরপূর্বক গত বুধবার (০৩ জানুয়ারি) রাত ১০ দিকে একটি ভেকু মেশিন এনে বৃহস্পতিবার ভোর বেলা পর্যন্ত মাটি কাটে। আমরা বাঁধা দিলে আমাদের ভয়ভীতি দেখায়। পরে আমরা স্থানীয় ৫ কপাট বন-বিট কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানকে জানালে তিনি এসে মাটি কাটা বন্ধ করে ভেকু মেশিনটি জব্দ করেন। এরপর থেকেই ভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া যুবলীগ নেতা নুর ইসলাম (নয়ন) বিভিন্ন ভাবে আমাদের বেড়িবাঁধের জায়গা ছাড়ার হুমকি দেয়। আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ারও ভয়ভীতি দেখান তিনি।
স্থানীয় বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারী ভূমিহীন নুর ভানুসহ আরও কয়েকজন জানান, আমাদেরকে উৎখাত করে ইটভাটা নির্মাণ করা হলে আমরা কোথায় বসবাস করবো। এবং আমাদের কৃষিশস্য আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হবে। এখানে ইটভাটা নির্মাণ করা হলে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হবে পাশাপাশি পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। আর সব চাইতে বেশি ক্ষতি হবে আমরা যারা ভূমিহীন তাদের এবং কৃষকের ফসল উৎপাদনে।
আওয়ামী লীগ নেতা নুর ইসলাম নয়ন বলেন, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বেড়িবাঁধের পাশে আমার ক্রয়সৃত্রে সাত একর জমি রয়েছে। সেই জমিতে আমরা ভাটা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তবে বন বিভাগের কাছ কাটা ও ভূমিহীন বসতি পরিবারদের উৎখাত করার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা ৫ কপাট বনবিট কর্মকর্তা মো আসাদুজ্জামান বলেন, বন বিভাগের গাছ কাটায় একটি ভেকু মেশিন জব্দ করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিমের জিম্মায় রাখা হয়েছে। যারা জোরপূর্বক বন বিভাগের গাছ কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। খুব দ্রুতই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-২ এর প্রকৌশলী মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আপনার কাছ থেকে শুনলাম। ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
-এসএফ/এমএ
