For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাজশাহী-১ আসনে নৌকার বিরুদ্ধে দলেরই ৪ প্রার্থী

Published : Thursday, 28 December, 2023 at 5:18 PM Count : 205



ভিআইপি প্রার্থীদের আসন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী -তানোর)। জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১ জন প্রার্থী এখানেই। এর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ সাতটি দল থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন। অন্য চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।

সাধারণ ভোটারেরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন না। এ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। আর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী আয়েশা আক্তার জাহান ডালিয়া ও আখতারুজ্জামান আক্তার।
এ চার প্রার্থীই বলছেন- টানা ১৫ বছরে ওমর ফারুক চৌধুরী নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেছেন। এর প্রতিবাদ হিসেবেই তাঁরা ভোটের মাঠে এসেছেন। ভোটের মাঠে এসব অগ্নিঝরা বক্তব্য সবচেয়ে বেশি বলছেন মাহিয়া মাহি। তবে চার প্রার্থীর প্রত্যেকেই নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।

তবে দলেরই অনেকে মনে করছেন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিপক্ষের ভোটগুলো চার ভাগে ভাগাভাগি হয়ে গেলে সহজ জয় পাবে নৌকা। কেননা, তিনি তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে দুই উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে সরকারের বিভিন্ন ভাতাভোগীদের নিয়ে সমাবেশ করেছেন। নৌকায় ভোট দিলে এ ভাতা দ্বিগুণ হবে- এমন কথা তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষকে বলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুই উপজেলার স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সব সময়ই নিজের পক্ষে কাজে লাগানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ অবস্থায় ফারুক চৌধুরীকে ঠেকাতে স্বতন্ত্র চার প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতার কথা ভাবছেন দলেরই কেউ কেউ। আওয়ামী লীগেরই এক নেতা এ উদ্যোগ নিচ্ছেন, এমন কথা ভাসছে। ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর কাছে এ ধরনের প্রস্তাব গিয়েছে। তবে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি কারও সঙ্গেই সমঝোতা করবেন না বলে সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছেন। আলাপ-আলোচনায় বসলে অন্য তিন প্রার্থী চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি আগে এ দুই উপজেলায় তেমন সক্রিয় ছিলেন না। শুধু নিজের নানার বাড়ি তানোরের মুণ্ডুমালা এলাকায় কিছু সামাজিক কাজকর্ম করতেন। তবে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে ভোটের মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছেন। হাটে, ঘাটে, মাঠে থেকে শুরু করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত যাচ্ছেন তিনি। সবখানে তিনি ‘চৌধুরীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে’ ভোট করছেন ঘোষণা দিয়ে ভোটারদের সব সময় সম্মান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

এছাড়া, বছরের পর বছর বরেন্দ্র অঞ্চলে যে পানির সমস্যা, তা নিরসনের কথা বলছেন। ফলে যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই ভালো সাড়া পাচ্ছেন ঢাকাই সিনেমার এ চিত্রনায়িকা। এই কয়েক দিনের প্রচারেই ভোটের মাঠে তিনি অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন।

নৌকার বিরুদ্ধে চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে জয় কতটা সহজ, এমন প্রশ্নে মাহিয়া মাহি বলেছেন, আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

স্বতন্ত্র চার প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতা হলে সরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে সমঝোতার কেউ কোনো প্রস্তাব দেয়নি। এ রকম কোনো সম্ভাবনাও নেই। আমি সরে যাব না। যে যে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেন, আমি তাঁদের সঙ্গেই লড়তে চাই।

এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীবিরোধী হিসেবে পরিচিত তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানীও ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। রাব্বানী আশা করছেন, বর্তমান এমপিকে ঠেকাতে তাদের চারজনের মধ্যে একটা সমঝোতা হবে।

তিনি বলেন, সবাই হয়তো প্রার্থী থাকবেন না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটা কিছু হতে পারে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে যে ভোট পড়বে, তার ৭০ ভাগ আমি একাই পাব। আমি আমার জয় নিয়ে চিন্তা করি না।

এ আসনে নির্বাচন করতে দীর্ঘ সময় ধরেই ভোটারদের কাছাকাছি থেকেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী আয়েশা আক্তার জাহান ডালিয়া। গোদাগাড়ী উপজেলায় তাঁর বাবার বাড়ি। দুই উপজেলায় তাঁর নিজস্ব কর্মী-সমর্থকও আছে। প্রচার-প্রচারণা শুরুর এক সপ্তাহ পর ভোটের মাঠে এসে তিনি ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন।

ভোটের মাঠে স্বতন্ত্রদের মধ্যে সমঝোতার প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এখনো কোনো প্রস্তাব পাইনি। আমরা সবাই তো প্রতীক পেয়েছি। যে যার মতো ভোটের কাজ করছি। আমিও তো এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে আছি। মানুষ আমাকে ভালোবাসে। দেখা যাক, সামনে কী হয়।

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান আক্তারও নিজের মতো করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও বর্তমান এমপি ফারুকের বিরোধী। তাঁকেও আসনটির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ধরা হচ্ছে। আখতারুজ্জামান গোদাগাড়ীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত বছর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন। দলীয় প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন মাত্র ৩২ ভোটে।

স্বতন্ত্রদের মধ্যে সমঝোতার প্রশ্নে আখতারুজ্জামান বলেন, দেখতে হবে প্রস্তাবটা কোন জায়গা থেকে আসছে। আমি যাদের নেতা মানি, সেই জায়গা থেকে যদি বসার প্রস্তাব আসে তাহলে তো বসতে আপত্তি নেই। বসার পরে কী সিদ্ধান্ত হবে সেটা পরের কথা। এখন ভোটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমি তো মনে করি, ভোটাররা ভোট দিতে পারলে আমিই নির্বাচিত হব। কারণ, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একজন এক সময় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তিনিও নানা অপকর্ম করেছেন। ভোটাররা সেটাও বিবেচনা করছেন।

এ আসনের স্বতন্ত্র চার প্রার্থীর প্রত্যেকেরই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল। আপিল করে চারজনই প্রার্থিতা ফিরে পান। প্রতীক বরাদ্দের আগেই নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছিলেন মাহিয়া মাহি। আর আদালত ঘুরে গোলাম রাব্বানী প্রতীক বরাদ্দের একদিন পর, আখতারুজ্জামান চার দিন পর এবং আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া এক সপ্তাহ পর প্রতীক পান। আখতারুজ্জামান ঈগল প্রতীকে, গোলাম রাব্বানী কাঁচি প্রতীকে, ডালিয়া বেলুন প্রতীকে এবং মাহি ট্রাক প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রাজশাহী-১ জাতীয় সংসদের ৫২ তম আসন। এ আসনের তানোর উপজেলায় পুরুষ ভোটার ৯০ হাজার ১৪৩ জন, আর নারী ভোটার ৯০ হাজার ৮৭০ জন। গোদাগাড়ী উপজেলায় পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৭০ জন।

আরএইচএফ/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,