For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

টুকুর নির্দেশে রেললাইন কাটেন যুবদল নেতা কবির

Published : Monday, 25 December, 2023 at 12:46 PM Count : 282

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নির্দেশনায় গাজীপুরেশ্রীপুরে রেললাইন কাটেন ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান যুবদল নেতা মো. ইখতিয়ার রহমান কবির (৪৩)। 

সোমবার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)'র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, রেলের লাইন কেটে নাশকতার ঘটনার মূলহোতা কবিরসহ দু'জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি। গ্রেপ্তারকৃত মো. ইমন হোসেন (১৯) লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ।

আসাদুজ্জামান বলেন, রেল লাইনে নাশকতা করে সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতি সঞ্চার এবং ব্যাপক প্রাণনাশের পরিকল্পনা করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু। গ্রেপ্তার যুবদল নেতা ইখতিয়ার রহমান কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন দলীয় উচ্চ পর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে। নাশকতাকারীরার রেল লাইন কাটার পর তাদের মোটা অঙ্কের টাকাও দেওয়া হয় দলীয় পর্যায় থেকে।
তিনি বলেন, রাজধানীতে গাড়িতে ভাঙচুর, আগুন দেওয়া ও বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সাধারণ মানুষ রেলকে নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু ট্রেনে চলাচল করা মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে ও রেল চলাচল বিঘ্ন করতে নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়। পাশাপাশি নাশকতার মাধ্যমে রেলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটানোর উদ্দেশ্য ছিল।

তিনি আরও বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুবদলের শীর্ষনেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নির্দেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবিরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কবির গাজীপুর ছাত্রদলের দুই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা হলেন গাজীপুরের আজিমুদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তোহা ও গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের বলা হয়, স্থান নির্বাচন করে নাশকতা সফল করার জন্য। তোহা ও মাসুম মিলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়ার বাসায় একটি মিটিং করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, প্রথমে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রেল লাইনের নাট-বল্টু খুলে ট্রেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করবেন। কিন্তু তারা নাট-বল্টু খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর বিষয়টি কবিরকে জানানো হয়। পরে কবির রেল লাইন কাটার নির্দেশ দেন পাশাপাশি রেললাইন কাটার জন্য লোকবল দেওয়ার কথা জানান। এ জন্য কবির লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইমন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রথমে ইমনকে বড় লোহার পাত কাটা শেখার জন্য টাকা দেন। ইমন লোহা কাটার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর স্থানীয় ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার কেনা হয়। আর লোহা কাটার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি কবির, ইমন, তোহা ও মাসুম মিলে রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুর মার্কেটের একটি দোকান থেকে ১০ ডিসেম্বর কিনে ইমনের বাসায় রাখেন।

তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ ডিসেম্বর ইমনের বাসা থেকে যন্ত্রপাতি গাজীপুর নিয়ে যাওয়া হয়। একই দিন ইমন ও কবির কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে জয়দেবপুর রেল স্টেশনে যান। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তোহা ও মাসুম চলাচলের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া করা, গ্যাস সিলিন্ডার কেনাসহ সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। এই সময়ে তারা ট্রেনের শিডিউল জেনে রাখেন। এরপর ১৩ তারিখ রাতে স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খাওয়ার পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে রওয়ানা দেন তারা। এই সময়ে বেশ কয়েকজনকে পথ থেকে তুলে নেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে মোট নয় জন একত্রিত হয়ে রেল লাইন কাটার কাজ শুরু করেন। আগে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ইমন অন্যদের সহযোগিতায় রেললাইন কাটেন। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কবির পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়নের সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।  

তিনি আরও বলেন, এই নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করা, ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন করা এবং মানুষ যেন রেলে যাতায়াত না করে। এই লক্ষ্যে তারা রেললাইন কাটেন। ঘটনাস্থলে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার ফেলে যান তারা। অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে তারা ঢাকায় চলে আসেন। ভাড়া করা মাইক্রোবাস তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের গেটে নামিয়ে দেয়। রেল কাটার যন্ত্রপাতি ইমনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময়ে কবির বেশ কিছু টাকা দেন ইমনকে। এরপর তারা আত্মগোপনে চলে যান। রেললাইন কাটা সফল হয়েছে বলে কবির নির্দেশদাতা টুকুকে জানিয়ে দেন। কবিরকেও বড় অঙ্কের টাকা পাঠান নির্দেশদাতা।

আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার কবির এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন গত ২৮ অক্টোবর থেকে যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, নিউ মার্কেট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টিরও বেশি বাসে আগুন দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, এই রেললাইন কাটার নির্দেশদাতা, পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও নাশকতার বেশ কয়েকটি ঘটনায় তার নাম এসেছে। এর আগে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় গান পাউডারসহ ছাত্রদল কর্মী গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদেও কবিরের নাম এসেছে। বিশেষ করে মহানগর দক্ষিণ এলাকায় যত নাশকতা ঘটেছে তার বেশির ভাগ ঘটনার মূল পরিকল্পনা ও নির্দেশদাতা হিসেবে তিনি জড়িত।

তিনি আরও বলেন, ডেমরায় বাসে আগুনের ঘটনায় চালকের সহকারী নিহতের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে আমরা খুঁজছিলাম। সবগুলো ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কবিরকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডে আনা হবে।  

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, টুকু তাকে ডেকে জানান, ওপর থেকে রেলে নাশকতার নির্দেশ আছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।  

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে রেললাইন কাটার ঘটনা বাস্তবায়নে কৌশল নির্ধারণে কাউন্সিলর আজমলের বাসায় মিটিং করা হয়।

গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়ার চিলাই ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে ফেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় এক যাত্রী নিহত এবং ট্রেনের লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়।

-এমএ

রেললাইন কেটে ফেলায় ট্রেন দুর্ঘটনা, নিহত ১

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,