অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাব
হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বজড়িত শমশেরনগর ডাক বাংলো
Published : Thursday, 14 December, 2023 at 8:54 PM Count : 342
অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে চালা ভেঙে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর ডাকবাংলো। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনারা এখানে ক্যাম্প স্থাপন করে নিরিহ বাঙালীদের নির্যাতন কক্ষে ও পাশের বটগাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করে শমশেরনগর বিমানবন্দরের বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করত পাক সেনারা।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে পাক সেনাবাহিনীর নজরদারিতে ছিল কমলগঞ্জের শমশেরনগর। তাই মৌলভীবাজার জেলা সদর (তৎকালীন মহকুমা সদর) থেকে একজন পাক সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে পাক বাহিনীর একটি টহল জীপ শমশেরনগর এসে টহল দিত। মাঝ মার্চে নকশাল দমনের নামে পাক সেনাবাহিনীর বাঙালি সেনা কর্মকর্তা মেজর খালেদ মোশারফকে শমশেরনগর পাঠানো হয়েছিল। তিনি এখানে এসে দেখতে পান নকশাল বলে কোন কিছু নেই। তবে মুক্তিকামী বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মিছিল করছে। এমতাবস্থায় ২৭ মার্চ বিকেলে পাক সেনাবাহিনীর একটি টহল জীপ এসে শমশেরনগর বাজারে অতর্কিতে ধাওয়া করে। এসময় দৌড়ে পালাতে গিয়ে সিরাজুল ইসলাম নামে এক বয়োবৃদ্ধ ম্যাজেশিয়ান রাস্তায় পড়ে গেলে পাক সেনারা তাঁকে গুলি করে ও ব্যয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
এ কারণে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন মরহুম মোজাফফর আহমদ, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমানের নেতৃত্বে শমশেরনগর নগরের মুক্তি পাগল মানুষজন পরদিন বিকেলে পরিকল্পিত প্রতিরোধ গড়ে হামলা চালিয়ে পাক সেনা ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলসহ ৯ জন পাক সেনাকে হত্যা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে এটি ছিল পাক সেনাদের উপর প্রথম হামলা। ফলে পাক সেনারা শমশেরনগর ডাকবাংলোতে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে শমশেরনগর নিরিহ বাঙালিদের উপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়ে পরে শমশেরনগর বিমান বন্দর বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করত।
শমশেরনগর ইউনিয়নের আব্দুল গনি, আব্দুর, আব্দুল বারি, আব্দুস শুকুর, মবশ্বির আলী, প্রতাপ পাল, পিযুশ পাল, পতনঊষার ইউনিয়নের কুমুদ রঞ্জন দত্তসহ শতাধিক মানুষকে ধরে এনে শমশেরনগর ডাকবাংলো নির্যাতন কক্ষে ও বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে নির্যাতন শেষে শমশেরনগর বিমানবন্দর বধ্যভূমিতে হত্যা করেছে পাক সেনারা।
বিজয়ের ৫২ বছর পার হলেও সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হয়নি মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি বিজড়িত শমশেরনগর ডাকবাংলো, নির্যাতন কক্ষ ও বটগাছ।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিন শমশেরনগর ডাকবাংলোয় গিয়ে দেখা যায়, অবহেলা আর অযত্নে বিনষ্ট হচ্ছে ডাকবাংলো ঘরটি। ডাকবাংলো ঘরের পিছনের উপরের চালা ভেঙে পরছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার শমশেরনগর প্রতিরোধ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন অবঃ সাজ্জাদুর রহমান (৮৪) বলেন, সরকারীভাবে উচিত মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি বিজড়িত শমশেরনগর ডাকবাংলো ঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা সংরক্ষণ করা।
তিনি আরও বলেন, সরকারি উদ্যোগে এ ডাকবাংলোর উন্নয়ন করা হলে যেন, টিনশেডের ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ ঘরটি অক্ষত থাকে।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিছবাউর রহমান বলেন, শমশেরনগর ডাকবাংলোয় বড় ধরণের উন্নয়ন করা হবে। এখানে বহুতল ভবনসহ স্যুমিংপুলও করা হবে। এ জন্য এখন আর ভাঙা চাল মেরামত করা হচ্ছে না।
এসএস/এসআর