For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

হাতি নেই, রয়েছে ২০০ বছরের পুরানো ‘হাতির কড়াই’

Published : Monday, 4 December, 2023 at 2:03 PM Count : 373

বাড়িতে হাতি নেই। অথচ হাতির জন্য রয়েছে মস্ত বড় একটা কড়াই। সেটাও আবার শিকলে বাঁধা। দাবি করা হচ্ছে, কড়াইটি পূর্ব পুরুষদের ২০০ বছরের ঐতিহ্য। শুধুমাত্র হাতিকে পানি পান করানোর জন্যই এই কড়াইটি ভারত থেকে আনা হয়েছিল। সম্প্রতি কড়াইটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিদর্শনের স্বীকৃতিও পেয়েছে।

২০০ বছরের স্মৃতিমাখা লোহার কড়াইটি সংরক্ষণে জাদুঘরে নিতে চেয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এতে আপত্তি তুলেছেন কড়াইটির দাবিদাররা। বরং নিজেদের কাছে রেখে এটিকে উন্মুক্ত করে দিতে চান। স্থানীয়রাও কড়াইটি হাতছাড়া করতে চাইছেন না। কড়াই রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধনও করেছেন। 

ঐহিত্য বহনের এ কড়াইটির সন্ধান মিলেছে নীলফামারীজলঢাকায়। কড়াইটি উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের তহশিলদারপাড়া এলাকায় রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দা হাজী এমদাদুল হকের বাড়ির আঙিনায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই কড়াইটি দেখার জন্য আসছেন।

লোহার এ কড়াইটি ৭ ফুট ব্যাসের। ওজন প্রায় এক টন। উচ্চতা প্রায় ৭ ফুট। ২৮ মণ ১০ কেজি আধা পোয়া ওজনের এ কড়াইটি ভারত থেকে কেনা। জনশ্রুতি রয়েছে, এটি প্রায় পৌণে ২০০ বছর আগের। সে সময়কার জমিদার বাড়িতে হাতির পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার হতো। বর্তমানে এ কড়াইটি নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ‌‘হাতির কড়াই’ নিয়ে কথা বলেছেন হাজী এমদাদুল হক। তিনি পূর্ব পুরুষদের স্মৃতিচারণ করে বলেন,  প্রায় ১৭৫ বছর আগে তার বাবার বড় ভাই মরহুম ভুল্ল্যা মামুদ সরকার এটি ভারত থেকে কিনে এনেছিলেন। ভুল্ল্যা মামুদ সরকার পেশায় ছিলেন তহশিলদার। হাতিকে পানি পান করানোর জন্য তিনি লোহার তৈরি এ কড়াইটি কেনেন। যুগের পরিবর্তনে হাতি না থাকলেও এখনো সেই কড়াইটি ঐতিহ্য বহন করে আসছে।

কড়াইটির বিষয়ে ভুল্ল্যা মামুদ সরকারের নাতি ইকবাল বিন ইমদাদ বলেন, বাবার মুখে শুনেছি, এটি ‘হাতির কড়াই’। আমার দাদার বাবার দুটো হাতি ছিল। বাড়ির পাশের দেওনাই নদীতে হাতি দুটোকে পানি পান করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু পানি পান করানোর পর না কি হাতি আর বাড়ি ফিরতে চাইতো না। এ কারণে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে কড়াইটি কিনে নিয়ে আসেন। পরে ওই কড়াইতে হাতিকে পানি পান করানো হতো। এখন হাতি নেই কিন্তু কড়াইটা আছে। বাপ-দাদার পুরানো ঐতিহ্য হিসেবে আমার বাবা এটি সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এই কড়াইটার জন্য এখন আমাদের এলাকাও বেশ পরিচিত। 

তিনি আরও বলেন, কড়াইটি ভালো ভাবে সংরক্ষণে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। ঝড়-বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে এটি নষ্ট বা ধ্বংস না হয়, সেটারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমাদের বংশের কারণে এলাকার নাম পরিচিতি পেয়েছে তহশিলদার পাড়া হিসেবে। এই নাম এবং কড়াইয়ের সঙ্গে আমাদের এবং এলাকার একটা ঐতিহ্য ও স্মৃতি জড়িয়ে আছে। প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর জাদুঘরে রাখার জন্য কড়াইটি চেয়েছিল, কিন্তু এটা তো আমাদের ব্যক্তিগত সম্পদ।

তাদের পরিবারের লোকজনের দাবি, কড়াইটি সরকারি কিংবা কোনো রাজা-বাদশার কীর্তি নয়, এটা তাদের বংশের ঐতিহ্য। এই কড়াইটির নামে এখানে মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে। গ্রামটির নামকরণও হয়েছে। পুরানো ঐতিহ্যের হাতির কড়াইটি এখন জাদুঘরে নেওয়ার জন্য এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছে।

তহশিলদার পাড়ার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলে, এখন হাতি নাই তো কী হইছে? আমাদের এলাকায় হাতির পানি পান করানোর জন্য বড় লোহার কড়াইটা আছে। এই কড়াইটি এখন আমাদের গ্রামের ঐহিত্য বহন করছে। এখানকার মানুষ যে এক সময় হাতি পুষত, তার প্রমাণ এটি।

রংপুর জাদুঘরের কাস্টডিয়ান বলেন, কড়াইটি জাদুঘরে সংরক্ষণের বিষয়ে আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে একটা চিঠি এসেছিল। সেই চিঠি আমরা নীলফামারী জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরবর্তী পদক্ষেপ বা করণীয় সম্পর্কে তারা আমাদের কিছু জানায়নি।

-এইচএস/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,