For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ভোক্তার অভিযানে কমে গেল গরুর মাংসের দাম, ব্যবসায়ীরা পেলেন ফুল

Published : Thursday, 30 November, 2023 at 4:37 PM Count : 235



জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের নিয়মিত বাজার তদারকি এবং নির্দেশনায় গরুর মাংসের দাম কমেছে। এখন রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫৯৫ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে যেসব ব্যবসায়ী এখনও বেশি দামে বিক্রি করছে তাদের প্রতি কঠোর নির্দেশনার পাশাপাশি যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং মূল্য তালিকা দৃশ্যমান রাখতে বলা হয়েছে। 

বেশ কিছুদিন থেকে গরুর মাংসের দাম উর্ধোমুখি হওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এ প্রাণিজ আমিষ। সম্প্রতি যৌক্তিক দাম নির্ধারণে রাজধানীসহ সারাদেশে গরুর মাংসের বাজারে বিশেষ অভিযান শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, শাহজাহানপুর বাজার এবং শান্তিনগর বাজারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তরের একটি টিম। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান, সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকাতে অধিদপ্তরের ৪ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৪ টি টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়া ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক  গরুর মাংসের দামের উপর 'বিশেষ বাজার অভিযান' পরিচালনা করা হয়।

অভিযানে দেখা যায়, রাজধানীর কাওরান বাজার, শাহজাহানপুরের বিভিন্ন মাংসের দোকান, খিলগাঁও বাজার এবং শান্তিনগরের প্রত্যেকটি মাংসের দোকানে ৫৯৫ থেকে ৬০০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। এবং প্রত্যেক ব্যবসায়ী দৃশ্যমান অবস্থায় মূল্য তালিকা টানিয়ে রেখেছেন। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে যেসব ব্যবসায়ী যৌক্তিক মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করছেন তাদের অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে লাল গোলাপের শুভেচ্ছা জানানো হয়। একই সঙ্গে বিশেষ ধন্যবাদের সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। 

এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশনায় দেশব্যাপী একযোগে গরুর মাংসের বাজারে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আজ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। যেসকল গরুর মাংস ব্যবসায়ীগণ যৌক্তিক মূল্যে ৬০০ টাকা বা তার কমে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করবেন তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হবে।  সে লক্ষ্যে আজকে আমরা রাজধানীর কাওরান বাজার, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও এবং শান্তিনগরের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখলাম, সব ব্যবসায়ী ৫৯৫ থেকে ৬০০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করছে। সকল ব্যবসায়ীকে আমরা মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়েছি এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, অনেকের ধারণা ভোক্তা অধিদপ্তর শুধু জরিমানা করে। সে ধারণা ভুল। আমরা চাই সকল ব্যবসায়ী আইন মেনে ব্যবসা করুক। যারা  আইন মেনে ব্যবসা করবেন এবং ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করবেন না, অতি মুনাফা করবেন না তাদের এমন শুভেচ্ছা জানানো হবে।

এদিকে গরুর মাংসের দাম কমায় স্বস্তি ফিরিছে ভোক্তাকুলে। দোকানিদের বিক্রিও বেড়েছে কয়েকগুণ। রাজধানীর শাহজাহানপুরের খলিল গোস্ত বিতানের মালিক জানান, আগে যেখানে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি গরুর মাংস বিক্রি করতেন এখন প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৯৫ টাকায় বিক্রি করায় প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। এতে তার লাভ এবং বিক্রিও বেড়েছে। 

মাংস বিক্রেতারা বলছেন, দামের কারণে বিক্রি একেবারেই কমে গিয়েছিল। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ গরুর মাংস কিনতেন না। দাম কমায় লাভের অংক কমেছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।

এদিকে ভোক্তা অধিদপ্তরের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছেন, অনেক দিন পর মাংসের দাম রাতারাতি কমে যাওয়ায় স্বস্তি হচ্ছে। আগে নিয়ম করে একবার-দুবার মাংস খাওয়া হতো। এবার মনে হচ্ছে, মাসে কয়েকবার খাওয়া যাবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের এমন কার্যক্রম নিয়মিত চালানো উচিত।

ক্রেতা-বিক্রেতারা খুশি হলেও অখুশি প্রান্তিক খামারিরা। তারা বলছেন, হুট করে দাম কমে গেলে তাদের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে দেশি জাতের গরু উৎপাদনের তাদের ভোগান্তির আশঙ্কা বেশি।

গত মার্চে গরুর মাংসের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা হয়েছিল। ফলে সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এ প্রাণিজ আমিষ। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। প্রান্তিক খামারিরা বিষয়টি ‘হুমকি’ হিসেবে দেখছেন।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, সরকারের উচিত হবে একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পকে গুরুত্ব দেওয়া। এখানে প্রতিটি বাড়িতে দুটি করে গরু প্রণোদনা হিসেবে দিতে হবে। এতে করে দেশে ব্যাপক উৎপাদন বাড়বে। তখন ৬০০ না ৪০০ টাকা করেও মাংস বিক্রি করা যাবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই খাতকে গুরুত্ব দিলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ১৪১টি দেশে মাংস রপ্তানি করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, এটিকে নিয়ম করে সঠিক ভাবে পালন করলে গরুর দাম কমে গেলেও কোনো প্রান্তিক খামারির ক্ষতি হবে না। কিন্তু মূল সমস্যা সিন্ডিকেটের। যারা এতে যুক্ত, তাদের দাম বাড়িয়ে দেন। খামারি-ব্যবসায়ী- ভোক্তাদের এতে ক্ষতি হয়। যারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বেশি লাভ করছেন তাদের কারণে বিশেষ করে ডেইরি মালিকদের লাভের পরিমাণ কমে যাবে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও সিটি কর্পোরেশন মিলে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে ৩২০ টাকা। ২০১৯ সালে সমিতির বিভিন্ন সংস্কারের পরামর্শ না শুনে সরকার দাম নির্ধারণ বন্ধ করে দেয়। ফলে মাংসের দাম বেড়ে কেজি প্রতি ৫০০ টাকা হয়ে যায়। ২০২০ সালে মাংসের দাম গিয়ে ঠেকে ৬০০ টাকায়। ২০২১-২২ সালে ৭০০, চলতি বছর মাংসের দাম বেড়ে হয় ৮০০ টাকা।

এসআর


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,