For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২৮ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা

Published : Thursday, 23 November, 2023 at 1:05 PM Count : 168

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে নয় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। তিন মাস আগে জুন প্রান্তিক শেষে যা ছিল ২৬ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় দুই হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে।

ব্যাংকগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্পোরেট সুশাসন এবং ব্যাংকিং ব্যবসার ভিত্তি মজবুত না হওয়ায় এ সংকটের উৎপত্তি। প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সংকেত। এটা ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে।

প্রভিশন ঘাটতি বলতে বোঝায় এসব ব্যাংকে থাকা নগদ অর্থের চেয়ে আর্থিক দায়বদ্ধতার পরিমাণ বেশি। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে তাদের নিয়মিত বা অশ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে পরিচালন মুনাফার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। এছাড়া নিম্নমানের শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং সন্দেহজনক শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। তবে মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংককে প্রভিশন হিসেবে আলাদা করে রাখতে হয় ১০০ শতাংশ অর্থ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ এমন ব্যাংকের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে বেশ আলোচিত ব্যাংকটি। আর্থিক পরিস্থিতিতে বেশ নাজুক ব্যাংকটি অন্যদের তুলনায় আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ আদায়েও পিছিয়ে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। খেলাপিসহ অন্য ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল ১৫ হাজার ৬৮১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি এক হাজার ৮৮৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। সে হিসাবে ন্যাশনাল ব্যাংক ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে।

আলোচ্য সময়ে প্রভিশন ঘাটতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণের ২৪ শতাংশের বেশি।

এরপরেই রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫৪২ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ৩৯৯ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংকের ৩৩৫ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২৩৪ কোটি টাকা এবং মধুমতি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৯০ লাখ টাকা।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের নয় দশমিক ৯৩ শতাংশ। এটি গত বছরের (সেপ্টেম্বর-২০২২) একই সময়ের তুলনায় ২৩ হাজার এক কোটি টাকা বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। ওই প্রান্তিকে দেশের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙে খেলাপি ঋণ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক তেমন সফলতা দেখাতে পারছে না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে। খেলাপি কমাতে না পারলে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শাখা বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে। গ্রাহককে ঋণ পরিশোধে বার বার সুযোগ দেওয়ার পরও কোনো সুফল আসছে না। যে নিয়মকানুন আছে সেটা কঠোর ভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। খেলাপিতে লাগাম টানতে এটা কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ঋণ বিতরণ ও ঋণ আদায়কে একই চোখে দেখতে হবে।’

বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অনিয়ম ব্যাংক খাতকে ঘিরে ধরেছে। তার প্রমাণ ব্যাংকগুলো প্রভিশন ঘাটতিতে পড়া। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ঋণ দেওয়ার কারণে ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে পারছে না ব্যাংক।’

তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বন্ধে আমাদের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপও নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। খেলাপির যে চিত্র দেখানো হচ্ছে- প্রকৃত চিত্র এটা নয়। প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ, আরও বড় হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে ছাড় দেওয়া হলো, অন্য সময়ও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। মোট ঋণের কিছুটা পরিশোধ করলেই আর খেলাপি হচ্ছে না, এমন সুবিধার পরও সুফল কতটুকু?’

ড. জাহিদের মতে, ‘গ্রাহককে ঋণ পরিশোধে বার বার সুযোগ দেওয়ার পরও কোনো সুফল আসছে না। যে নিয়মকানুন আছে সেটা কঠোর ভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। খেলাপিতে লাগাম টানতে হলে নিয়মকানুন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ঋণ বিতরণ ও ঋণ আদায়কে একই চোখে দেখতে হবে। এক কথায় এখানেও থাকতে হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। ব্যাংক খাতে ঋণ আদায় হচ্ছে না, আবার বিতরণও হচ্ছে। এভাবে খেলাপি কমবে না।’

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,