রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দৌলতদিয়া পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ সরকার মহা প্রকল্প গ্রহণ করে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকার জিওব্যাগ ফেলছে নদীর পাড় রক্ষার জন্য । যার কার্যকারিতা বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার সাত নম্বর ফেরিঘাটের পাশেই দুটি ভেকু দিয়ে মাটি তুলে ট্রাকে দিচ্ছে এবং সারি সারি ট্রাক দাঁড় করানো আছে। প্রতিদিন কয়েকশো ট্রাক বালু এখান থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে এই অঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর ধুলাবালিতে পরিপূর্ণ এবং রাস্তাঘাটের চিহ্নও নেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ফেরিঘাটসহ পুরো এলাকাটি রয়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। খুব দ্রুত বিলীন হয়ে যাবে ঘাটসহ গ্রামটি।
অন্যদিকে, বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকাসহ আশপাশের ফসলি জমি। গত তিন বছরে সাত হাজার ১০৫টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এই উপজেলার এক পঞ্চমাংশ নদীগর্ভে বিলীন হলেও বালু খেকোরা থেমে নেই। স্বনামে বেনামে চলছে বালু উত্তোলন।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে সরকারের মহা প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকায় এখানে নদী শাসনসহ কয়েকটি ঘাট করার পরিকল্পনা রয়েছে। যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন সেটাও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে বালু খেকোদের কারণে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের তথ্যমতে, পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে ২০১৭ সালে এক হাজার ৯১৫টি, ২০১৮ সালে দুই হাজার ৭০টি এবং ২০১৯ সালে তিন হাজার ১২০টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এই অঞ্চলের অনেক গ্রাম।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এখানে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু মহলের জমি রয়েছে তারা সেই সুযোগে নদীর বালু বিক্রি করে সাবার করে দিচ্ছে।
পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এবং ভেকু দিয়ে নদীর বালু বিক্রি করছে নির্বিচারে। এতে নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গণ সৃষ্টি হচ্ছে। একইসঙ্গে কৃষি জমি ও বসতভিটাও পড়েছে হুমকির মুখে। পাশাপাশি সারা দিন ট্রাকের শব্দে অতিষ্ঠ
হয়ে উঠেছে আশপাশের মানুষ। গতবছর থানা পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দিলেও আবার সেটা খুলে তারা ব্যাবসা চালিয়ে যায়।
বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, স্থানীয় বেলায়েত মন্ডল ও খোকনের নির্দেশে তারা বালু উত্তোলন করছে। এবং এ জায়গা তাদের। বালু স্থানীয় দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের রাস্তার কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে। শতশত ট্রাক বালু কি সেখানে প্রয়োজন হচ্ছে এমন প্রশ্নে তারা বলেন, কিছু বালু বিক্রি করা হচ্ছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা-৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্য সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। তদন্ত করে খুব শীঘ্রই ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এসআই/এমবি