মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে ৪ জনের যাবজ্জীবন
Published : Tuesday, 31 October, 2023 at 10:52 PM Count : 273
জামালপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা সদস্য আব্দুল বারীকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে রেলওয়ে থানার সাবেক ওসি ও দুই পুলিশ সদস্যসহ চার জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিশেষ দায়রা জজ মুহাম্মদ আবু তাহের দণ্ডাদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জামালপুর রেলওয়ে থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌরচন্দ্র মজুমদার, সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সোহরাব আলী, সাবেক কনস্টেবল তপন বড়ুয়া ও জামালপুর রেলওয়ের টিকিট কালেক্টর (টিসি) আনিছুর রহমান।
মামলা ও আদালত সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা সদস্য আব্দুল বারীর ছোট ছেলে মাজহারুল হক বাবু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ'র ছাত্র। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই ছেলে বাবুকে বাসা থেকে জামালপুর রেল স্টেশনে দিয়ে যান। বাবু রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশ্যে তার তিন বন্ধুকে নিয়ে যমুনা সেতু (পূর্ব) পর্যন্ত ৫ আপ ট্রেনের চারটি টিকিট কাটেন। ট্রেন আসার পর তিন জন বন্ধু এক বগিতে এবং বাবু অন্য বগিতে ওঠেন। এরপর টিকিট কালেক্টর (টিসি) আনিছুর রহমান টিকিট চেক শুরু করেন। এ সময় তিনি বাবুর কাছে টিকিট চাইলে তিনি বলেন যে, তার টিকিটটি অন্য বগিতে তার বন্ধুর কাছে রয়েছে।
এটা শোনার পর টিসি বাবুকে ট্রেন থেকে নামিয়ে স্টেশনের একটি রুমে আটকে রাখেন। এ কথা শুনে বাবা আব্দুল বারী স্টেশনে ছুটে যান এবং ছেলেকে বের করেন। এসময় তিনি রেলওয়ে থানার ওসি ও দুই পুলিশের কাছে ছেলেকে আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারীকে পুলিশ আঘাত করে। আহতাবস্থায় তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ সেনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শাহ্ মিজানুর রহমান মুকুল বাদি হয়ে জিআরপি থানায় মামলা করেন। মামলায় জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌর চন্দ্র মজুমদার, কনস্টেবল তপন বড়ুয়া, এএসআই সোহরাব ও টিসি আনিসুর রহমানকে আসামি করা হয়।
মামলার দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানি শেষে রেলওয়ে থানার সাবেক ওসি ও দুই পুলিশ সদস্যসহ চার জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং একইসঙ্গে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
মামলার বাদি শাহ্ মিজানুর রহমান মুকুল বলেন, মামলার আসামিরা জামিনে ছিলেন। রায়ের সময় তারা আদালতে উপস্থিত হন। আসামিদের মধ্যে গৌর চন্দ্র মজুমদার চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা থেকে অবসরে গিয়েছেন। আসামিদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল, পরবর্তীতে তারা আবার চাকরিতে বহালও হয়েছিলেন।
এ রায়ে বাদিপক্ষ খুশি না বলেও তিনি জানান। তার দাবি, কনস্টেবল তপনের ফাঁসির আশা করেছিলেন।
অপরদিকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি সোরহাব আলীর স্ত্রী মাহবুব আক্তার বলেন, তার স্বামী ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কুশলী (পিপি) এডভোকেট নূরুল করিম ছোটন বলেন, মামলার রায়ে আপাতত রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। তবে রায় ফাঁসি হলে বাদি আরও খুশি হতেন। এ ব্যাপারে বাদিপক্ষের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে।
-জেডজে/এমএ