দিনভর ১৮০ রোহিঙ্গা পরিবার প্রধানের সঙ্গে আলোচনা শেষ করতে পারেননি মিয়ানমার থেকে আসা ৩২ সদস্যের প্রতিনিধিরা। দলটি মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদীর জালিয়াপাড়াস্থ জেটিঘাট দিয়ে ফের মিয়ানমার চলে গেছেন।
বুধবার সকালে এই প্রতিনিধি দলটি আবারও টেকনাফে আসবেন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে অসমাপ্ত আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক সেলের মহাপরিচালক মাইনুল কবির সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করছে। সরকার সব সময় রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ী ভাবে সমাধানের উপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের জায়গায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে পারে সে বিষয়ের গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রত্যাবাসন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটা চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যায়।
তিনি আরও বলেন, এর আগে চলতি বছর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল দু'বার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করতে এসেছিল। সে সময় তারা (মিয়ানমার প্রতিনিধি) রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে (মিয়ানমার) যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আজকেও তারা সুনির্দিষ্ট করে বলেছে, কোন গ্রামে কে যাবে? কিভাবে যাবে? এই আলোচনাটা আমাদের সঙ্গে অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে।
তবে রোহিঙ্গারা কখন স্বদেশে ফিরে যাবেন সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেন মাইনুল কবির।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা শুধু এখান (বাংলাদেশ) থেকে যাওয়াটাই নয়, যাওয়ার পরও যেন তারা সেখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে পারে এবং প্রত্যাবাসনটাও যেন টেকসই ও স্থায়ী হয়, সে জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার প্রচেষ্টা চলছে।
প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সংশয় ও অবিশ্বাস দূর করতে মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মহাপরিচালক।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদীর জালিয়াপাড়াস্থ জেটিঘাট দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের এ প্রতিনিধি দলটি। এরপর বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নদী নিবাস রেস্ট হাউজ এবং গণপূর্ত বিভাগের রেস্ট হাউজে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমার ফিরে গেছেন।
বুধবারও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটি টেকনাফ আসবেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলটি দু’দলে বিভক্ত হয়ে ১৮০ জন রোহিঙ্গা পরিবারের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মূলত প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আদায়ে এ আলোচনা চলছে।
আলোচনার জন্য আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে নিজ ভিটে-মাটি ও নাগরিকত্ব দিলেই স্বদেশে ফিরবেন তারা।
মিজানুর রহমান বলেন, জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দু’দেশের চুক্তিতে উল্লেখ্য রয়েছে। আমরা জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করি, দু’পক্ষের কথা-বার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ টেকসই এবং স্বেচ্ছায় হবে- এ জন্য বাংলাদেশ সরকার সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে চলতি বছর দু’বার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফে। গত ১৫ মার্চ প্রথম দফায় এবং গত ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এসেছিলেন মিয়ানমার প্রতিনিধি। এরই মধ্যে গত ০৫ মে বাংলাদেশের সাত সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি আশ্রয়রত রয়েছেন। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।
-এফআই/এমএ