আল্লাহ একটু সময় দিলো না ঘরের জিনিষ পত্র বের করার। তিল তিল করে গড়া ঘরের আসবাব পত্রসহ ধান,পাট টাকা কড়ি কিছুই নিতে না পেরে আহাজারী করছে ঐ এলাকার সারিয়াকান্দির কামালপুরের ইছামারার ৬০ উর্ধ নারী রওশন আরা।
চোখের পলকে বগুড়া সারিয়াকান্দি কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা গ্রামের একাংশ যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইছামারার শতাধিক বাড়ি একের পর এক যমুনার গর্ভে চলে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির জানান এ্ই ভাঙ্গন রাতে ঘটলে বহু প্রানহানী ঘটতে পরতো।
কারন চোখের পলকে একে একে শতাধিক বাড়িঘর যমুনায় তলিয়ে গেল। মানুষ শুধু অসহায়ের মত শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো।
সারারাত কাজ করেছে উপজেলা প্রশাসন ,পানি উন্নয়ন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। কিন্ত রাক্ষুষে যমুনার কাছে ছিল মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণ।
বসতবাড়ীর টিনের চালা ভাসছে যমুনায়। খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করছেন ভাঙনের শিকার এলাকাবাসী। ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো এলাকায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন।
নদী ভাঙনের শিকার মৃত গোলাম মোস্তাফার স্ত্রী স্বপ্না বেওয়া বলেন, গত ২ মাস আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। বিকাল ৩ টার দিকে দেখলাম যমুনা নদীতে প্রচন্ড আওয়াজ হচ্ছে। পরে দেখি আমার প্রতিবেশীরা তাদের বাড়ীঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। পরে বুঝতে পারলাম নদী ভাঙছে। আমিও কোনকিছু না ভেবে আমার বাড়ীঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ছোটাছুটি করে নিরাপদ স্হানে রেখে আসা শুরু করলাম।
কয়েক মিনিটেই দেখি আমার বাড়ীঘর যমুনায় ভেঙে গেল। বাড়ীঘরের জিনিসপত্র রক্ষা করতে আমরা যমুনায় ঝাঁপ দিলাম। যমুনায় ঝাঁপ দিয়েও কোনও জিনিসপত্র বাঁচাতে পারিনি।
কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাছেদুউজ্জামান রাসেল জানান, এ গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা হঠাৎ যমুনা নদীর ভাঙনে যমুনায় বিলীন হয়েছে।
বিলীন হয়েছে প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি এবং তাদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। ভাঙনের শিকার এলাকাবাসীকে স্হানীয় একটি মাদ্রাসায় সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে।
তবে ভাঙন শুরু হওয়ার পর পরই সেখানে গেছেন এবং ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীকে নানাবিধ সহযোগিতা করেছেন, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক, উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মন্টু, মেয়র মতিউর রহমান মতি, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেশ কুমার চক্রবর্তী, কামালপুর ইউপির চেয়ারম্যান রাছেদুউজ্জামান রাসেল প্রমুখ।
সারিয়াকান্দি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় বড় আকারের জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ভাঙনের শিকার এলাকাবাসীকে স্হানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙানরোধ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান কোন মানুষ অভুক্ত থাকবেনা। পর্যপ্ত খাবার মজুদ আছে ।
এ দিকে সারিয়াকান্দি উপজেলার হাসনাপাড়া স্পারের মাটির স্যাংক এর ভাঙন ঠেকতে সক্ষম হয়েছে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখনও সেখানে কাজ চলছে।
এজে/এমবি